এইচবি রিতা: ‘নিউইয়র্ক সিটি শুধু একটি শহর নয়, এটি এক বিশাল স্বপ্নের মঞ্চ, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ একসঙ্গে জীবন গড়ে তোলে। ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, শহরটি তার বৈচিত্র্য, উদ্ভাবনী শক্তি ও একতার মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে উঠেছে। আমাদের সমাজের প্রতিটি সদস্যই এই গৌরবময় অগ্রগতির অংশ, যেখানে একে অপরের প্রতি সম্মান ও সহযোগিতাই আমাদের সত্যিকারের শক্তি। এমনটাই বলেছেন সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস্।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কমিউনিটি অপ:এড-এ অ্যাডামস্ আরো বলেন, ‘আমরা জানি, বর্তমান সময়টি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই: আমাদের শহরের সরকার ও হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী আপনাদের পাশে আছে, নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অনুগ্রহ করে নিউইয়র্ক সিটির বহুমুখী সেবাসমূহের সুবিধা গ্রহণ করুন। নির্ভয়ে আপনার সন্তানদের স্কুলে পাঠান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন এবং নিজের, পরিবারের ও সমগ্র নিউ ইয়র্কবাসীর নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য যে কোনো অপরাধের বিষয়ে রিপোর্ট করুন।’
নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের অফিস অব ইমিগ্র্যান্ট অ্যাফেয়ার্সের (এমওআইএ) কমিশনার, অভিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছেন, যাতে তারা ফেডারেল অভিবাসন কার্যক্রমের মুখোমুখি হলে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন। এ নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা সম্পর্কে জানার জন্য এমওআইএর ওয়েবসাইট দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাডামস্। লিঙ্ক-https://www.nyc.gov/site/immigrants/index.page
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহর এমন একটি স্থান যেখানে সব নিউইয়র্কবাসী নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করতে পারেন- আপনি কোথা থেকে এসেছেন, কোন ভাষায় কথা বলেন, আপনার ধর্ম, লিঙ্গ বা যৌন পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা আমাদের অভিবাসী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সমগ্র ‘এলজিবিটিকিউ’+ সম্প্রদায়ের পাশে আছি, যার মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার ও জেন্ডার নন-কনফর্মিং নিউ ইয়র্কবাসীরাও অন্তর্ভুক্ত। আপনার বা আপনার প্রিয়জনদের জন্য আরও তথ্য ও সহায়তা পেতে অনুগ্রহ করে আমাদের ইউনিটি প্রজেক্ট দেখুন।’
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে পড়ালেখার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরির জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পাঠ্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। স্কুলগুলো অভিবাসন পরিস্থিতি নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেয়। এখন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য থ্রি-কে এবং প্রি-কে-তে ভর্তির আবেদন করতে পারেন, পাশাপাশি অন্যান্য গ্রেডেও ভর্তি হতে পারেন।
সামার ইউথ এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামও রয়েছে; যা ১৪-২৪ বছর বয়সী তরুণদের জন্য বেতনের বিনিময়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। আবেদনের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। এখনই আবেদন করতে পারেন।
অ্যাডামস আরো বলেন, ‘আমাদের শহরের শক্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যেক নিউইয়র্কবাসীর স্বাস্থ্যের ওপরও নির্ভর করে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা দেখেছি যে, টিকাগুলো রোগের বিস্তার রোধ করতে এবং আমাদের সকলকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করেছে। ইন্সুরেন্স বা অভিবাসন অবস্থা যাই হোক না কেন, সব বয়সী নিউইয়র্কবাসী গুরুত্বপূর্ণ টিকা কম খরচে বা বিনামূল্যে নিতে পারবেন। এর মধ্যে কোভিড-১৯, ফ্লু, পোলিও ও হামসহ বিভিন্ন রোগের টিকা অন্তর্ভুক্ত। আজই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করুন এবং আপনার পরিবার ও আমাদের শহরকে নিরাপদ রাখুন।’
নারীদের স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে বলে জানান অ্যাডামস্। যাদের প্রজনন সংক্রান্ত সেবার প্রয়োজন, তারা নিরাপদ, গোপনীয় ও আইনসিদ্ধ গর্ভপাত পরিষেবার জন্য ১-৮৭৭-৬৯২-২৪৮২ নম্বরে কল করতে পারেন বা স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাবরশন অ্যাক্সেস হাব পরিদর্শন করতে পারেন।
অ্যাডামস্ জানান, মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য ১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘টকস্পেস’-এর মাধ্যমে বিনামূল্যে অনলাইন থেরাপির সুবিধা দিচ্ছে। পাশাপাশি, নিউ ইয়র্কবাসীরা যে কোনো বয়সে ৯৮৮ নম্বরে কল করে বিনামূল্যে ও গোপনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার পরামর্শ, সংকটকালীন সহায়তা, মাদকাসক্তি বিষয়ক পরামর্শ ও অন্যান্য সহায়তা পেতে পারেন।
অ্যাডামস্ বলেন, ‘আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, নিউইয়র্ক সিটিতে বৈষম্য আইনত নিষিদ্ধ। আমাদের স্টেটের সংবিধান ও সিটি চার্টার অনুযায়ী, লিঙ্গ, বয়স, জাতি, যৌন পরিচয়, জাতিগত পরিচয়, জন্মস্থান, বিশ্বাস, সামরিক স্টেটাস, নাগরিকত্ব, ধর্ম বা শারীরিক অক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। অনুগ্রহ করে আপনার প্রতিবেশীদের প্রতি সদয় ও শ্রদ্ধাশীল হোন এবং নিজের প্রতিও একই ধরনের সদয়তা ও সম্মান আশা করুন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শহর একটি আশার বাতিঘর এবং এমন একটি স্থান, যেখানে বিশ্বজুড়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসে নতুন জীবন গড়তে পারে।’