নিউইয়র্ক: জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দল, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি সংগঠনের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবার মেয়র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে বিশাল সমর্থন সংগ্রহ করেছেন। ৩২ বিজে এসইআইইউ (হোটেল ও পরিষেবা শ্রমিক ইউনিয়ন) এবং ১১৯৯ এসইআইইউসহ (স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বৃহত্তম ইউনিয়ন) গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমর্থন তাঁর ঝুলিতে এসেছে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান কিছু নির্বাচিত কর্মকর্তারাও তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নিউইয়র্ক সিটির ভোট ব্যাংকে শ্রমিক ইউনিয়নের বিশাল প্রভাব থাকায় এটি কুয়োমোর জন্য বড় সুবিধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে জোহরান মামদানি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও রেনোসো, রাজ্য সিনেটর জাবারি ব্রিসপোর্ট, ক্রিস্টেন গঞ্জালেজ ও জুলিয়া সালাজার তার প্রার্থিতাকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া, সিটি কাউন্সিল সদস্য জেনিফার গুটিয়েরেজ ও স্যান্ডি নার্সও তাকে সমর্থন করেছেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে জেলা পরিষদ ৩৭, ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স রিজিওন ৯এ এবং পেশাদার স্টাফ কংগ্রেস মামদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। প্রগতিশীল সংগঠনগুলির মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা, নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির সমর্থনে এসেছে তার।
মামদানি নিউইয়র্কের খেটে খাওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার নির্বাচনী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে বাসে চলাচল ফ্রি করা, রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড ইউনিটের রেন্ট ফ্রিজ করা ও চাইল্ড কেয়ার ফ্রি করা অন্যতম।
বর্তমান সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামসও শক্ত সমর্থন পেয়েছেন। নিউইয়র্ক রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস তার প্রার্থিতাকে সমর্থন দিয়েছেন। যা তাকে আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায় ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটদের মধ্যে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে এনেছে। এছাড়া, নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি এবং বেশ কয়েকটি স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনও অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটর জেলনর মাইরি ও জেসিকা রামোস নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল ভোটারদের মন জয় করছেন। তারা স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাসরুটস সংগঠন এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্য থেকে ছোট কিন্তু কার্যকরী সমর্থন পাচ্ছেন। বিশেষ করে হাউজিং, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরাধ দমনের মতো ইস্যুতে তাদের স্পষ্ট অবস্থান তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা তৈরি করছে।
সাবেক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার ও বর্তমান কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ডেমোক্রেটিক ক্লাব এবং প্রথাগত দলীয় সংগঠনগুলোর সমর্থন আদায়ে মনোযোগী। স্ট্রিংগার ইতিমধ্যে কিছু ঐতিহ্যবাহী ম্যানহাটন ডেমোক্রেটিক ক্লাবের সমর্থন পেয়েছেন। যেখানে ল্যান্ডার ব্রুকলিন ও কুইন্সে তার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাচ্ছেন।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এখনো পর্যন্ত বড় কোনো আনুষ্ঠানিক সমর্থন পাননি। শহরের অপরাধ পরিস্থিতি ও আবাসন সমস্যা নিয়ে সমালোচনার মুখে তিনি পড়েছেন। যদিও তিনি পুলিশের সাথে তার সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অঙ্গীকার তুলে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবুও তার পুনর্নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সমর্থনের এই প্রাথমিক চিত্র কেবলই নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। সমর্থনের এই চিত্র নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি সংযোগ, ইস্যু ভিত্তিক প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের দক্ষতার ওপর। বিশেষ করে মাইগ্র্যান্ট, শ্রমজীবী ও তরুণ ভোটারদের ভূমিকা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’