চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নিয়েও ভরাডুবি হয়েছে জামায়াতের সাবেক কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর জামাতা আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর। ‘রাতারাতি উত্থানে’র মত রাতারাতিই যেন হারিয়ে ফেলেছেন হঠাৎ পাওয়া রাজত্ব! সব হারিয়ে নদভী তবু আশা ছাড়েননি। জোর চেষ্টা চালান টেকনোক্র্যান্ট কোটায় মন্ত্রী হতে। কিন্তু পাননি গ্রিন সিগন্যাল। এরপরও সহজে হাল ছাড়তে চান না নদভী। এবার স্ত্রীর ছায়ার নিচে পেতে চান আশ্রয়। সেই আশায় স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে জাতীয় সংসদের সদস্য করতে নদভী জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। খবর চলমান নিউইয়র্ক.কমের
স্থানীয়দের ধারণা, সংসদ নির্বাচনে হেরে হঠাৎ পাওয়া রাজত্ব হারানোর পাশাপাশি গেল দশ বছরের নানা কর্মকাণ্ডের জেরে এলাকায় জনরোষের মুখে পড়তে পারে নদভী পরিবার। তাছাড়া, টানা দুই বার সাংসদ থাকার সুবাদে প্রভাব প্রতিপত্তি গড়লেও স্থানীয় রাজনীতিতে এখনো নিজের অবস্থান গড়ে নিতে পারেনি নদভী পরিবার। টানা দশ বছর আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ থাকার পরেও এখনো ‘জামায়াত’ কলঙ্ক মোছা যায়নি। তাই, রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে মন্দের ভাল হিসেবে স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনে জাতীয় সংসদে পাঠাতে চান নদভী। সে অনুযায়ী দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন স্বামী-স্ত্রী।
জামায়াত-ঘনিষ্ট নদভীর আওয়ামী লীগে উত্থান অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান। তাতে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে যান নদভী। সেবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এলাকার অঘোষিত রাজা বনে যান তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে গড়ে তুলেন নিজের অনুগত কর্মীবাহিনী। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করে সমালোচিত হয়েছেন বার বার।
এরমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা বাগিয়ে নিলে তার পক্ষে কাজ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমে ফের জয়ী হন নদভী। জয়ী হয়েই ফের জামায়াত ঘরনার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রাজত্ব শক্ত করার কাজে নামেন তিনি। তার রোষে পড়ে কোনঠাসা হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি নানা সময় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মারধরও করেন নদভী। এত কিছুর পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নৌকা বাগিয়ে নেন তিনি। নৌকা পেয়ে আরো লাগামহীন হয়ে উঠেন নদভী।
তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীতের নির্বাচন করার সুযোগ থাকায় প্রার্থী হন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব। এতে ভোটের মাঠে তার পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। যার ফলস্বরুপ ভরাডুবি হয় নদভীর। আসনটিতে প্রার্থী টানা দুই বারের সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে হারিয়ে প্রথম বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব। তিনি পান ৮৫ হাজার ৬২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী পান ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট। যা মোতালেবের অর্ধেকেরও কম।
অন্য দিকে, রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বলা হলেও তার এই পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। মূলত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকটা আলাদিনের প্রদীপের পরশের মত মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা পান তিনি। মূলত রিজিয়া রেজা চৌধুরী জামায়াত ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে একাধিক বার জামায়াতের সাংসদ প্রার্থী ছিলেন মুমিনুল। বাবার জামায়াতার রাজনীতির সুবাদে মেয়েও বেড়ে উঠেন জামায়াতের বলয়ে। স্বামী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী পূর্বেই পরিচিতি পান জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সংবাদ মাধ্যম এড়িয়ে চলেছেন। সংরক্ষিত আসনে জাতীয় সংসদের প্রার্থী হতে তদবিরের ব্যাপারেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের দুজনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাননি এই প্রতিবেদক।
তবে, তাদের এই তদবিরকে দৃষ্ঠতা হিসেবেই দেখছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘তদবির করলেও এমনি কোন সম্ভাবনা নেই। তবে, এটা ধৃষ্টতা বলে মনে করি আমি। এটা খুবই ধৃষ্টতা।’