বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না; খুনীদের সাথে সংলাপ নয়

মঙ্গলবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্থ করেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে ও কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।

তিনি আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত চক্রের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘খুনিদের সাথে কোন সংলাপ হবে না। খুনিদের সাথে কোন সংলাপ বা আলোচনা হবে না ও বাংলাদেশের জনগণও তা চায় না। আর আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে ও কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে গণবভনে তার সাম্প্রতিক বেলজিয়ামের ব্রাসেলস সফর সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগদানের জন্য ২৪-২৬ অক্টোবর এই সফর করেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভা তাদের রুটিন কাজ করবে ও মন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে বিএনপির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেন, যাতে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে হত্যা ও অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও ৪৫ জন সাংবাদিককে অমানবিক নির্যাতন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) পুলিশ হাসপাতালেও হামলা করেছে ও সেখানেও ইসরায়েলের মত (ফিলিস্তিনের ওপর হামলা) মানুষ হত্যা করেছে।’

‘বিএনপি ও ইসরায়েলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ, হামলার বর্বরতা একই ছিল,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমি বলব, এসব কাজ থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত। এতে রাজনৈতিকভাবে তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আর নির্বাচনের বিষয়ে যেটা আমার ধারণা, এরা আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।’ তিনি এসব সন্ত্রাসিদের উচিত শিক্ষা দেয়াও প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।

বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অধীনে তাদের বিচারের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা আলোচনা করব।’

তিনি বলেন, ‘তারা জঘন্য কাজ বন্ধ না করলে তাদের এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এরমধ্যেই সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদের এদের সাথে আমরা যতই ভাল ব্যবহার করি না কেন, এদের কখনই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে এরা বিশ্বাস করে। কারণ, অবৈধভাবে অস্ত্রহাতে ক্ষমতা দখরকারির হাতে এদের জন্ম। কাজেই এরা ঐটাই (সন্ত্রাস) ভাল বুঝে, আর কিছু নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটাই এদের চরিত্র। কাজেই এখানে আমার বলার কিছু নেই, আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গিয়েছি সকলেই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে পড়েছে বিএনপি আর জামায়াত জোট।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসি সংগঠন। সেই সন্ত্রাসীদের কিভাবে শিক্ষা দিতে হবে,. সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর সেটাই আমরা দেব। এদের জন্য এই দেশটা ধ্বংস হোক, সেটা সহ্য করা যাবে না।’

বিএনপির সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন মালিকদের ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মত তার সরকার সহযোগিতা করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত ভাষণে তার ব্রাসেলস সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে অংশীদারিত্ব একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে গেল ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়।

‘শঠের সাথে শঠের মত আচরণ করতে হবে’, এমনটা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে ও গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেয়া হবে। আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যে গাড়ি পোড়াবে আর যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পোড়ায়ে দেয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে, না হলে শিক্ষা হবে না।’

গেল ২৮ অক্টোবর বা পরবর্তী যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অপরাধী জামিন পেয়ে ছুটে এসেছে। জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেহেতু এরা জামিন পেয়ে গেছে, এরা অপরাধ করছে। এদের দ্রুত সাজা দিয়ে শিক্ষা দেয়া উচিত। এভাবে আগুন লাগাবে আর মানুষের ক্ষতি করবে এটা কখনো মেনে নেয়া যায় না।’

এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, ‘দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে।’

২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারের পক্ষে গেল কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাভ-ক্ষতির বিষয় না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-ক্ষতি না জিজ্ঞেস করে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করা দরকার- তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করুন, এসব করে তারা কী পেয়েছে।’