শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

শিরোনাম

নেতানিয়াহুর পালানোর গুঞ্জন

শনিবার, জুন ১৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

 

নিউজ ডেস্ক: যুদ্ধকালে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে চলে গেলে,সেটা কিছু সময়ের জন্য হলেও জনমনে গভীর অনাস্থার জন্ম দেয়। সমালোচনা ও জল্পনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, তিনি ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সাময়িকভাবে দেশ ত্যাগ করেছেন। এ ঘটনা ঘটে ইসরায়েলের একতরফা আগাম আক্রমণের পর, যা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর চালানো হয়।

ইসরায়েল শুক্রবার শুরুর সময়ে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি বিস্ময়কর আকাশপথ অভিযান শুরু করে। এতে ইরানের শতাধিক সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। ঠিক একই সময়ে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বিমান ‘উইং অব জায়ন’ তেল আবিব থেকে উড়ে যায় এবং পরে এটি গ্রিসের অ্যাথেন্সে অঘোষিতভাবে অবতরণ করে। হিব্রু ভাষার একাধিক সংবাদমাধ্যম ও বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো জানায়, ফ্লাইটটি ছিল ‘জরুরি প্রটোকলের’ অংশ, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া।

ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্র জানান, জাতীয় নিরাপত্তা বা প্রধানমন্ত্রীর গতিবিধি নিয়ে তারা তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করেন না। জেরুজালেম পোস্ট, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও সারায়েভো টাইমসের খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু হয়তো ওই ফ্লাইটে ছিলেন এবং এটি ছিল সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক আক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করার পরিকল্পনার অংশ। অন্যদিকে আনাদোলু এজেন্সি ও নিউজ.এএম জানায়, ওই বিমানে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।

ইসরায়েলের অভিযানের মধ্যেই ইরানের আইআরজিসি পাল্টা হামলা চালায়। শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা ও দক্ষিণ ইসরায়েল লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। জেরুজালেম এবং উপকূলীয় শহরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েলি সিভিল ডিফেন্স ব্যবস্থা সক্রিয় করা হলেও অনেক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ নাগরিকরা বাংকার ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই যদি প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ যাত্রার গুজব সত্যি হয়, তাহলে সেটা সাধারণ মানুষের কাছে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভক্ত মতামত দিয়েছেন। কেউ বলছেন, নেতানিয়াহুকে সরিয়ে নেওয়া একটি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, এটা এক ধরনের পালিয়ে যাওয়া।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ বলেন, যখন সাধারণ নাগরিকরা ক্ষেপণাস্ত্রের নিচে তাদের ঘরে আশ্রয় নিচ্ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যি পালিয়ে যান, তাহলে এটা নেতৃত্ব নয়; পরিত্যাগ।

চ্যানেল থার্টিন নামের একটি সংবাদমাধ্যমের জরিপে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহু আসলেই দেশ ছেড়েছেন। মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ সরকারের চুপ থাকার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন। তেল আবিবের এক বাসিন্দা বলেন, ‘যদি সত্যি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মুহূর্তে দেশ ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে কাকে ভরসা করব?’

ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করলেও গোপনে ইসরায়েলি নেতৃত্বকে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসেছে। ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া ইসরায়েলের আগাম হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একটি নিরাপদ সরকারি ভবন থেকে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি কোনো বিদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেননি। যুদ্ধকালে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে চলে গেলে,সেটা কিছু সময়ের জন্য হলেও জনমনে গভীর অনাস্থার জন্ম দেয়। নেতানিয়াহুর এ বিমানযাত্রা কৌশলগত হয়ে থাকলেও ইসরায়েলি নাগরিকদের মন থেকে “তিনি পালিয়ে গেছেন” ধারণা মুছে যাবে না।