খুলনা: বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৭৭৩ জন নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ বুধবার (৩১ মে) খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম নেন। পরে তিনি কৃতি নবীন নাবিকদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন।
নৌবাহিনীর এ/২০২৩ ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে মো. মেহেদী হাসান মারুফ পেশাগত ও ব বিষয়ে সেরা চৌকস নাবিক হিসেবে ‘নৌপ্রধান পদক’ পেয়েছেন। মো. আল-আমিন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ ও মো. ইব্রাহীম তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘তিতুমীর পদক’ লাভ করেন।
নৌপ্রধান নবীন নাবিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সেই সাথে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
এম শাহীন ইকবাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে সুপরিচিত। একটি সমৃদ্ধশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নৌবহরে সাবমেরিনসহ আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর সাবমেরিনগুলোর অপারেশনাল কর্মকান্ড ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুতুবদিয়ার পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ কমিশনিং করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় ও সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তায় নির্মিত ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটি শীঘ্রই কমিশনিং করা হবে। যেখানে বড় পরিসরে নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে, এ ঘাঁটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৌবাহিনীর আভিযানিক, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আসবে।’
এম শাহীন ইকবাল বলেন, ‘ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শীপইয়ার্ডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফ্ট এর নির্মাণ শেষ হয়েছে; যা শিগগির নৌবহরে যুক্ত হবে। সেইসাথে নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। নৌবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজ সংযোজন ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
নৌপ্রধান নৌবাহিনীর এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উচ্চ মনোবল ও সাহস নিয়ে নবীন নাবিকদের একযোগে দেশের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেন।
তিনি নৌঘাঁটি তিতুমীরে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য নাবিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবা ও দেশ গড়ার পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেয়ায় নবীন নাবিকদেরকে ধন্যবাদ জানান।
সেই সাথে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সহকারী নৌপ্রধান (পার্সোনেল), খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডারসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং নবীন নাবিকদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।