সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

পদত্যাগ করতে সরকারকে সাত দিনের আলটিমেটাম ইসলামী আন্দোলনের

শুক্রবার, নভেম্বর ৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: দেশের সংকপূর্ণ মুহুর্তে প্রেসিডেন্টকে দায়িত্বশীল ভুমিকা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের বন্দোবস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।

তিনি বলেছেন, ‘একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেশের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠছে। দেশের সংঘাতপূর্ণ সময়েও সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষার কারণে নেতাকর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামী আন্দোলন দেশ, ইসলাম ও জনগণের যে কোন ন্যায্য দাবিতে মাঠে সরব ভুমিকা পালন করে আসছে। দাবি আদায়ে যে কোন ত্যাগ-কুরবানী, এমনকি জীবন ও রক্ত দিতেও দ্বিধা করবে না। জুলুম, নির্যাতন, হামলা-মামলা করে ন্যায়ের পথের এ পথিকদেররক দমিয়ে রাখা যাবে না। ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলন কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে।’

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাবেশে রেজাউল করীম এসব কথা বলেন।

তিনি বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে আটককৃত সব রাজবন্দি ও আলেমের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পীর সাহেব চরমোনাই আগামী ১০ নভেম্বর মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করে এবং জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সব নিবন্ধিত ও প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানান।

সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব শীর্ষ নেতাকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলের সাথে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, ‘সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে, আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হব।’

জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর প্রতি সমর্থনও ঘোষণা করে পীর সাহেব চরমোনাই।

সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তৃতা করেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি হযরত আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, নায়েবে আমীর মুহাদ্দিস আব্দুল হক আজাদ ও মাওলানা আব্দুল আঊয়াল পীর সাহেব খুলনা, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা মাওলানা খালিদ সাইফুল্ল্নাহ, আল্লামা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক ও মুহাম্মদ আক্কাস আলী সরকার, মাওলানা আবদুল কাদের, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, যুগ্ন মহাসচিব আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মুফতী এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সভাপতি আবুল কাশেম, জান্নাতুল ইসলাম, মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শেখ ফজলুল করীশ মারূফ, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি শওকত আলী হাওলাদার, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন খান, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলনা নুরুল ইসলাম আল-আমিন, মাওলানা শোয়াইব হোসেন, জিএম রুহুল আমীন, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বরকত উল্লাহ লতিফ, নুরুল করীম আকরাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী মানসুর আহমদ সাকী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী রেজাউল করীম আবরার, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ।

মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, সৈয়ধ বেলায়েত হোসেন ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী।

বাদ জুমু’আ মহাসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল দশটার মধ্যে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে সমাবেশ স্থলে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। সকাল দশটায় জাতীয় মহাসমাবেশ শুরু হয়ে দুপুর একটা ১৫ মিনিটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারি মহাসচিব প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদের খুৎবা দান ও ইমামতিতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জুমু’আর অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের কারণে পুরো শাহবাগ, মৎস্যভবন এলাকা, কাকরাইল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট এলাকা যানশুন্য হয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়।

এতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘সরকারের পতন ত্বরান্বিত করে একটি দেশপ্রেমিক ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। দেশ আজ প্রায় যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত। কেবলমাত্র একজন ব্যক্তি, একটা দলের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, শান্তি, শৃংখলা, অর্থনীতি সবকিছুই আজ হুমকির মুখে। স্বাধীনতার প্রধানতম চাওয়া একমুঠো খাবার; তাও আজ মানুষের জন্য দুর্লভ হয়ে উঠেছে।’

দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘দেশে কোন কোন মাসে মূল্যস্ফীতি ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়। খরচ সামলাতে না পেরে খাদ্য তালিকা থেকে মাস-গোস্ত-ডিম-দুধ বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে আলুর কেজিও ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ডিমের হালি কিনতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। বাজারে গিয়ে অনেককে খালি হাতে ফিরতে দেখা যায়।’