চট্টগ্রাম: শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘শিক্ষা পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘নয়া কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজ এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্ব বিদ্যমান, তা সমাজকে স্থবির করে দেয়। নয়া কারিকুলামের প্রধান লক্ষ্য হল আমাদের সন্তানদের দক্ষ, জ্ঞান ও বিজ্ঞান মনস্ক মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। তাই, একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে ভবিষ্যতের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তারাই এক দিন আমাদের অর্থনীতি ও জাতীয় উৎপাদনে প্রধান কারিগর ও চালিকা শক্তি হবে।’
রোববার (২১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রীর সিটির কেসি দে রোডস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বর্তমান সরকারের অধীনে কোন পন্থা ও নীতি অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে- এ ব্যাপারে আলোকপাত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মহিবুল হাসান চৌধুরী আরো বলেন, ‘বর্তমানে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করলেও মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এক কোটি ৮০ লক্ষ শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করতে পারে। এই দুই কোটির মধ্যে মাত্র ২০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করতে পারে। তাই, এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, প্রচলিত শিক্ষা ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করতে পারায় তারা দক্ষ মানবসম্পদে উন্নিত হতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাঙালিদের অধিকাংশই অদক্ষ। তাই, এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গতি খুবই মন্থর। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যে ২৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এগুলোর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব না হলেও এখন থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে আমরা অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।’
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে মহিবুল হাসান বলেন, ‘প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধীনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা সুরক্ষায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে একটি মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজনীতি সৃষ্টিশীল এবং জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অব্যবস্থ্যাপনা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক দোকান নয়, শিক্ষার্থীরা যাতে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে ও নিজেরা নিজেদের সংস্থান করতে পারে, সেই দিকে শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের মনযোগী হতে হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মহিবুল হাসান বলেন, ‘নিজেদের পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ও কর্তব্য পরায়ন হতে হবে। শিক্ষকরা অবশ্যই রাজনীতি করবেন কিন্তু অন্ধভাবে রাজনৈতিক দলের তোষামোদকারী হয়ে নিজের হীন স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা না করাটায় বাঞ্চনীয়। এতেই শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা ও সৃজনশীলতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শত ফুল বিকশিত হবে।’
শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি বাণিজ্য ও অন্য কোন অনৈতিকতা ও অনিয়মের সাথে কেউ যুক্ত হলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং এই নির্দেশনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতি নির্ধারনী কাঠামো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা প্রায়োগিকস্তরগুলো হল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-দপ্তর, অধিদপ্তর এবং অনান্য প্রশাসনিক কাঠামোগুলো এবং এইসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি শাহাজাদা মহিউদ্দিন।