বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

পার্কচেষ্টার জামে মসজিদের নির্বাচন: সহিদ-সাব্বির পরিষদের মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ

বৃহস্পতিবার, মে ১৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদের স্থগিতকৃত নির্বাচন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে জয়নাল-মুর্শেদ প্যানেল। এতে সহিদ-সাব্বির পরিষদের মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যালেসে এ সংবাদ সম্মেলনের আযোজন করা হয়। এতে আয়োজকরা বলেছেন, ‘জয়নাল-মুর্শেদ প্যানেল আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রায় অনুসারে ভোটার তালিকার মাধ্যমেই নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত জয়নাল-মুর্শেদ প্যানেল।’

জয়নাল-মুর্শেদ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবদীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ শারফিন মুর্শেদের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বর্তমান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আহিয়া। উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি মো. আব্দুল মতিন, সহ কোষাধ্যক্ষ তারেক আহমদ, মেইনটেনেন্স সেক্রেটারী মো. ফটিক মিয়া, কার্যকরী সদস্য জুয়েল আহমেদ, ফারুক আহমেদ ও হুসাইন জামান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, আব্দুল হাই, আব্দুস সালাম, মো. শাহিন মিয়া, মো. আরিফ চৌধুরী, তাজুল ইসলাম।

বর্তমান কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ মুর্শেদ মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে জয়নাল-মুর্শেদ পরিষদের পক্ষে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আহিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলন করতে চাইনি। কিন্তু, পরিবেশ-পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সহিদ-সাব্বির পরিষদ বার বার সংবাদ সম্মেলন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন। তাই, প্রকৃত সত্য উপস্থাপন ও সহিদ-সাব্বির পরিষদের বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য প্রকাশের প্রতিবাদে আজকের এ সংবাদ সম্মেলন।’

সংবাদ সম্মেলনে মসজিদের স্থগিতকৃত নির্বাচন ২০২২ বিষয়ে বলা হয়, ‘পার্কচেষ্টার মসজিদের কার্যকারী কমিটি সবার সম্মতিক্রমে এলাকার গণ্যমান্য, সচেতন ও ধর্মভীরু মানুষের মধ্য থেকে পাঁচজনের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ওই নির্বাচনে জয়নাল-মুর্শেদ এবং সহিদ-সাব্বির পরিষদের পক্ষ থেকে দুটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। নির্বাচন কমিশনের প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই শেষে সহিদ-সাব্বির পরিষদের একজন সদস্য গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনে প্রার্থী বিবেচিত না হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তাদের নির্বাচন বয়কটের তৎপরতা এবং মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অপচেষ্টা। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত নমিনেশন প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হলে জয়নাল-মুর্শেদ এবং সহিদ-সাব্বির পরিষদের পক্ষ থেকে শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা, পোস্টারিং ও ভোটারদের বাসায় বাসায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা। কিন্তু, জনসংযোগ করতে গিয়ে সহিদ-সাব্বির পরিষদ উপলব্ধি করতে পারে যে, নির্বাচনে তাদের জয় সম্ভব নয়। তখনই, তারা শুরু করেন নির্বাচন বাতিলের নতুন পরিকল্পনা।’

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘সহিদ-সাব্বির পরিষদ প্রথমে কার্যকরী কমিটির আর্থিক অনিয়মের দোহাই দিয়ে নির্বাচন বাতিলের পাঁয়তারা শুরু করেন। তারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন ও আর্থিক অনিয়মের জন্য মামলা করারও হুমকি দেন। কিন্তু, আর্থিক লেনদেনের কোন অনিয়ম না পেয়ে তাদের দ্বিতীয় পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। এরপর শুরু হয় সহিদ-সাব্বির পরিষদের ভোট বাতিলের তৃতীয় পরিকল্পনা। তারা বলতে শুরু করেন, ভোটার তালিকা হতে নতুন ১০৪ জন আজীবন সদস্যের ভোট বাতিল করতে হবে। এ ১০৪ জন আজীবন সদস্য মসজিদের হিসাবে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০০ ডলার জমা দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সদস্য হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ১০৪ জন আজীবন সদস্যের মধ্যে ৩৪ জন আজীবন সদস্য সহিদ-সাব্বির পরিষদের পক্ষ থেকে কার্যকারী কমিটির কাছে সদস্যপদ ফরম জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তখন তাদের এ ১০৪টি ভোট বৈধতার বিষয়ে কোন আপত্তি ছিল না। অথচ, এখন এ ১০৪টি ভোট বাতিলের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সহিদ-সাব্বির পরিষদ নির্বাচন কমিশন ও মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে এ ১০৪ জন ভোটারের ভোট বাতিলের দাবি জানায়। ট্রাস্টি বোর্ড ও নির্বাচন কমিশন অতীতের নির্বাচনগুলোর নথি পর্যালোচনাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে ১০৪ জন আজীবন সদস্যের ভোট বাতিলে অস্বীকৃতি জানায় এবং এ ১০৪টি ভোট বৈধ ঘোষণা করেন।’

সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে গত নভেম্বরে মসজিদের বেইসমেন্টে সহিদ-সাব্বির এবং জয়নাল-মুর্শেদের সব প্রার্থীকে নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচনী বিধি-বিধান এবং ইভিএমের ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশন ২০২২ এর ২০ নভেম্বর নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করে। ওই সভায় সহিদ-সাব্বির পরিষদও তাদের মতামত উপস্থাপন করে। পরবর্তী নির্বাচনী আমেজে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে। এ প্রচারণার মধ্যেই ঠিক নির্বাচনের আগের দিন শনিবার নির্বাচন কমিশন ও কার্যকরী কমিটির কাছে নির্বাচন স্থগিত করার জন্য একটি কোর্ট অর্ডার হস্তান্তর করা হয়। আমরা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি, এ দুইজন লোক কোর্টের দারস্থ হয়ে মসজিদের এত বড় ক্ষতি করবেন। নির্বাচনের জন্য ভোটাররা কাজে ছুটি নিয়ে রোববার যখন মসজিদে ভোট দিতে আসেন, তখন ভোট স্থগিতের কথা শুনে ভোটাররা হতবাক হন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সহিদ-সাব্বিরের মামলা করার ইচ্ছা থাকলে তারা মামলা আরো আগেই করতে পারতেন, ভোটারদের সাথে তামাশা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। ২০২১ সালে বর্তমান কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে আব্দুস সহিদের ছেলেসহ অনেকেই আজীবন সদস্য হয়ে ভোটা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমান কার্যকরী কমিটির পাঁচ সদস্য দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তারা হলেন- আব্দুল সালাম, সাইদুল ইসলাম, হোসেইন জি চৌধুরী (শিপু), ইসলাম উদ্দীন ও জুয়েল আহমদ।’

সংবাদ সম্মেলনে জয়নাল-মুর্শেদ পরিষদের পক্ষে বলা হয়, ‘কার্যকারী কমিটি ওই আজীবন সদস্যের ১০৪টি ভোট বৈধ মনে করে। কার্যকরী কমিটি সবার সম্মতিক্রমে রেজুলেশন পাশ করার মধ্য দিয়ে মুসল্লিদের নতুন আজীবন সদস্য হওয়ার সময়সীমা ২০২২ এর ৩০ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মসজিদে পর পর দুই শুক্রবার মুসল্লিদের আজীবন সদস্য হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের সুবিধার্থে নোটিশ বোর্ডে লিখিত আকারে আজীবন সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরবর্তী মসজিদের আজীবন সদস্যদেরকে নিয়ে সাধারণ সভার মাধ্যমে এ ১০৪ জন আজীবন সদস্যের ভোট গ্রহণের বৈধতা নেয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে সহিদ-সাব্বির পরিষদের বার বার সংবাদ সম্মেলন এবং মিথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার-প্রচারণার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

তারা বলেন, ‘সহিদ-সাব্বির পরিষদ পরাজয় নিশ্চিত জেনে মামলা দায়ের করে নির্বাচন স্থগিত করেছিল।’

আল্লাহর ঘর মসজিদের কার্যকরী কমিটি নির্বাচনকে ইস্যু না করার আহবান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘সহিদ ও সাব্বিররা মসজিদকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের নাচ-গানের অনুষ্ঠানে মানায়। মসজিদের নেতৃত্বে মানায় না।’

বক্তারা আরো বলেন, ‘নির্বাচনের দিন তারিখ নির্ধারণ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। আমরা আশা করছি, আগামী ঈদুল আজহার পর নির্বাচন হবে। যদি ভোটাররা সহিদ-সাব্বির প্যানেলকে নির্বাচিত করেন, আমরা সে ফলাফল মাথা পেতে নেব। বর্তমান কমিটি সাথে সাথেই নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।’