নিউজ ডেস্ক: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পুশইনের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে। শনিবার বিকালে গাজীপুরের ভবানীপুর এলাকায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে অনেকের জ্বালা ধরেছে। কেন জ্বালারে ভাই, কারণটা কী? আমাদের একটি বন্ধুদল প্রশ্ন করেছেন- ওই বৈঠকে নাকি সরকারের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন- আপনাদের ইতিহাসটা বলেন তো ভাই? আপনারা কখন নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন? পাকিস্তান আন্দোলনে আপনারা সমর্থন করেননি। একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জনগণের সঙ্গে আপনারা বিরোধিতা করেছেন। আপনারা ৮৬ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচন করেছেন। আপনারা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্দোলন করেছেন। আপনারা এইবার কী করেছেন? ৫ আগস্টের পরে বললেন, আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেবেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবেন। তাহলে আপনাদের রাজনীতিটা কিসের রাজনীতি?
‘রাজনীতি মানেই হচ্ছে জনগণের সঙ্গে ওয়াদা, জনগণের সঙ্গে অঙ্গীকার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেটি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার প্রমাণ দিয়েছেন, বলেছেন এই হাসিনা দুর্বৃত্ত, এই হাসিনা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, এই হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে, মানুষ কথা বললে তার ঠিকানা হয়েছে আয়নাঘরে, তার ঠিকানা হয়েছে পুলিশের অত্যাচার, তার ঠিকানা হয়েছে জেল-হাজত, তার বিরুদ্ধে শতশত মামলা, স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে জেলখানা। আপনি সেই আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেবেন? যে শেখ হাসিনা জুলাই আগস্টের রক্তাক্ত আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। একদিকে শহীদ মুগ্ধ-আবু সাঈদ আরেক দিকে চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম, আহানাত, সৈকত। এ আওয়ামী লীগ শিশু-কিশোর, তরুণদেরকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আপনাদের রাজনীতিটা ভুলে ভরা! এ ভুলে ভরা রাজনীতি আপনারা শুরু থেকেই করে এসেছেন। আর বিএনপি সব সময় ইতিবাচক রাজনীতি করে এসেছে। আমরা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে, আমাদের ভূখণ্ড রক্ষার স্বার্থে কখনো আপস করেনি। খালেদা জিয়া যদি আপস করতেন, তাহলে তাকে ৫-৬ বছর কারাগারে থাকতে হতো না। তার ওপর যে জুলুম নির্যাতন তা সহ্য করতে হতো না।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন, তিনি জনগণকে কখনও ছেড়ে যাননি। আজকে এত বড় বড় কথা বলেছে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কত অপপ্রচার, কত কুৎসা রটিয়েছে, কত কী বলেছে। কই তিনি তো কখনো দেশ ছেড়ে যাননি। শত অপমান নির্যাতনের কাছেও তিনি মাথানত করেননি। এই হলো বেগম খালেদা জিয়া। আর শেখ হাসিনার এত পুলিশ, এত র্যাব, এত টাকা পাচার। সোনালী ব্যাংক লোপাট, একটার পর একটা ব্যাংক লোপাট, শুনি টাকা উড়ে সিঙ্গাপুরে, অস্ট্রেলিয়ায়, সিডনিতে, তাদের টাকা উড়ে বেড়ায় দুবাই, সুইজারল্যান্ডে, কানাডায়। এসব শেখ পরিবার, না হয় আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী যার ২০০-৩০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ পাওয়া গেছে ইংল্যান্ডে। কে এই সাইফুজ্জামান, শেখ হাসিনার ভূমিমন্ত্রী। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের পুলিশ দুই তিনটা সম্পদ জব্দ করেছে। শেখ হাসিনা এর দায় কি আপনার না? আপনার এক একটা মন্ত্রী এক একটা ব্যাংক নিয়েছে, এ ব্যাংকগুলোতে কোনো টাকা নাই। জনগণের টাকা খালি করে প্রচার করে দিয়েছে বিদেশে। এজন্য কি দায় শেখ হাসিনার নেই, আওয়ামী লীগের নেই। তারা গোটা বাংলাদেশ অন্যের হাতে লিখে দিতে চেয়েছে আর বলেছে আমরা যত পারি লুটেপুটে নিয়ে চিরদিনের জন্য বিদেশে আরামে আয়েশে থাকবে। এইটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, তাদের যারা প্রভু তারা এতদিন তো পুশইন করেনি, খুবই আসক্ত ছিল! কই শেখ হাসিনার সময় আপনারা তো পুশইন করেননি? গতকালও তারা ২০-২২ জনকে পুশইন করেছে। এরমধ্যে ৪-৫ জনের কাছে ভারতীয় নাগরিকের কার্ড পাওয়া গেছে। কেন পুশইন করছেন? পায়ে পাড়া দিয়ে, গায়ে ধাক্কা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ কি ঝামেলা পাকাতে চায় বাংলাদেশের সঙ্গে? হঠাৎ করে আজকে নীলফামারীর বর্ডার, লালমনিহাটের বর্ডার, ঠাকুরগাঁওয়ের বর্ডার, মৌলভীবাজারের সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ২০/২৫/৪০টা করে ‘বিদেশি নাগরিক’ বলে বাংলাদেশে পুশইন করছে।
তিনি এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন।
ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বয়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক মিলন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সচিব ব্যারিস্টায শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় গবেষণা বিষয়ক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওমর ফারুক সাফিন, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তাহের মুসল্লী, এমদাদুল হক মুসল্লী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপির রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, খালেকুজ্জামান লাভলু, রাশেদুল হাসান প্রমুখ।