ঢাকা: ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন পাবলিক করা ও ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা।
শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিআরের প্রাক্তন মহাপরিচালক (ডিজি) নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সিটিং প্রধানমন্ত্রী একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের খুন করেন। এ জন্যই আমরা শহীদ দিবস দাবি করছি। ১৫ বছর যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তা আমরা মানি না। কারণ, প্রধান হত্যাকারী (যিনি নির্দেশ দিয়েছেন) তিনি তখন গণভবনে। এ ঘটনায় যারা নির্দোষ, এখনো জেল খাটছেন, তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাই।’
নিহত মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট দূরে হয়ে যায়নি। এর পেছনে বহু ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক এ হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা হয়।’
নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। আমার পিতা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’
নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা আরো বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমাদের একটাই দাবি, বিচার চাই। একটা স্বচ্ছ বিচার হোক। আমরা এ ব্যাপারে আর লুকোচুরি চাই না। চাপ দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল। বাধার মধ্যে ১৬ বছর পার করেছি।
পরিবারগুলোর সাত দাবি: সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে পূর্বে যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন পাবলিক করতে হবে; হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিন বিচারক যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছেন, দ্রুত সেই ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে হবে। এতে পর্দার আড়ালে রয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে; অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে ও গ্যাজেটে নিহতদের সকলকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে; ২৫ ফেব্রুয়ারি শোক দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে; পিলখানা ট্র্যাজেডিকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; এ ঘটনাকে ঘিরে যেসব সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং নির্দোষ কোন বিডিআর জওয়ানকে যেন কোনভাবেই সাজা না দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে সাকিব রহমান ও মেজর শাকিলের ছেলে রাকিন ছাড়াও অন্য নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরাও বক্তব্য দেন।