ঢাকা: তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মজুরি বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ মজুরি ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমরা তৈরি পোশাক শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করছি। আগের আট হাজার টাকা থেকে নূন্যতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হবে। এছাড়া, তাদের জন্য বছরে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।’
তাছাড়া বেতন গ্রেড সাতটি থেকে কমিয়ে পাঁচটি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া, শ্রমিকরা মোট বেতনের ৬৩ শতাংশ পাবেন বেসিক হিসাবে। পাশাপাশি, প্রতিটি পরিবার পাবে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড।
মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষ এই কাঠামোতে সম্মতি জানিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া, জীবনমান ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মজুরি বোর্ড।
আগামী ২০ নভেম্বর নতুন কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ করা হবে; যা আগামী জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।
বৈঠক শেষে মালিকদের পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মজুরি কার্যকর করা হবে। অর্থাৎ, ডিসেম্বর থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে।’
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভা কক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। এতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। অন্য দিকে, মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও স্টার্লিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য মো. কামাল উদ্দীন এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ।
সভায় মালিকপক্ষ মজুরি বোর্ডের সভায় শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়।
তার আগে পঞ্চম সভায় মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৪ টাকা প্রস্তাব করেছিলেন। বিপরীতে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি দশ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
চূড়ান্তভাবে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়ে যায় গত ১ নভেম্বরের সভা। ওই সভায় মজুরি নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও শ্রমিকদের মজুরির গ্রেড সাতটি থেকে কমিয়ে পাঁচটি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন মালিকপক্ষ। সে সময় বলা হয়েছিল যে, নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা চলছে।
গেল ১ নভেম্বরের সভা শেষে মালিকপক্ষ বলেছিল, ‘দাবি করা সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা পাবেন না শ্রমিকরা। তবে তাদের দেয়া প্রস্তাব দশ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। এবার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০২৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বাস্তবসম্মত নিম্নতম মজুরি কাঠামো প্রস্তাবনার জন্য শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো হচ্ছে- গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক মূল মজুরি (বেসিক) সর্বমোট মাসিক মজুরির ন্যূনতম ৬১ শতাংশ করা; গার্মেন্টস শ্রমিকদের পদ ও শ্রেণিবিন্যাসে গ্রেডিং সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে পূর্বের সাতটি গ্রেডের বদলে পাঁচটি গ্রেডে ভাগ করা; মূল মজুরির ওপর দশ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে; পর পর দুটি গ্রেডের মধ্যে নূন্যতম মজুরির পার্থক্য দশ শতাংশ করতে হবে; নতুন শ্রমিকদের জন্য তিন মাস শিক্ষানবিশকাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
পিস রেট বা প্রোডাকশন শ্রমিক: সোয়েটার কারখানা বা পিস রেটে কর্মরত শ্রমিককে প্রোডাকশন না থাকলে বিগত তিন মাসের মজুরির গড়/তিন নম্বর গ্রেডের বেসিক মজুরি পরিশোধ, কাজের আগে রেটের ফয়সালা করা।
উৎসব ভাতা: যে কোন সম্প্রদায়ের শ্রমিক ও কর্মচারীরা স্ব স্ব সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি উৎসবে প্রতিটিতে ছয় মাসের অধিক চাকরির ক্ষেত্রে এক মাসের মূল মজুরি হারে দুটি উৎসব ভাতা ও ছয় মাসের অনধিক চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটিতে ১৫ দিনের মজুরি হারে দুটি উৎসব ভাতা প্রাপ্ত হবেন। শ্রমিকের উৎসব ভাতা এক মাসের মূল মজুরির কম হবে না।
স্বীয় পদে/গ্রেডে চাকরির সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক কারখানায় গ্র্যাচুইটি সিস্টেম প্রচলন করতে হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকাল হিসেবে দশ বছরের অধিক সময় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সমান হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চাকরি থেকে অবসরের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি দিতে হবে; মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ছয় মাস দিতে হবে; শ্রমিকদের পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা দিতে হবে; নতুন মজুরি নির্ধারণের পর যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ি ভাড়া না বাড়ে, তা তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (সরকারের ভর্তুকিমূলক পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা)।