বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

প্রখর গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরবাসী

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ৪, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: প্রায় দেড় মাস ধরে চট্টগ্রাম সিটির নানা এলাকায় প্রখর গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কোন কোন এলাকায় দিন ও রাতের কোন সময়ই গ্যাস থাকছে না বলে জানিয়েছেন নগরবাসী। এর ফলে, গৃহস্থালির কাজ কর্ম ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে।

নগরবাসী জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। তবে, সম্প্রতি তা আরো তীব্র হয়েছে। তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, তারা ২৪ ঘণ্টায় কোন সময় গ্যাস পান না।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি, রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রামে স্বাভাবিক সময়ে জাতীয় গ্রিড থেকে ৩১০-৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। তবে, বুধবার (৩ জানুয়ারি) মাত্র ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়।

গেল ২২ অক্টোবর থেকে নগরবাসী গ্যাস সংকটে ভুগছেন ও বেশিরভাগ এলাকায় সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, মহেশখালী এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহের চাপ কমে যাওয়ায় গ্যাস ঘাটতি দীর্ঘ দিন থাকতে পারে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে ভোক্তাদের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) সভাপতি ওমর হাজ্জাজ।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) তিনি মন্ত্রীর কাছে পত্রও পাঠিয়েছেন।

পত্রে ওমর বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৪০০-৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হলেও এখন মাত্র ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। মোট গ্যাসের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দুটি সার কারখানা ও একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, অবশিষ্ট গ্যাস নগরবাসী, শিল্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিতরণ করা হয়, যা যথেষ্ট নয়।’

‘বাকি গ্যাস নানা কৌশলগত পদ্ধতিতে নগরীর বিপুল সংখ্যক আবাসিক গ্রাহক, কারখানা ও সিএনজি স্টেশনে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে, কারখানা ও পরিবারগুলো মারাত্মক গ্যাস সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।’

কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন ডিভিশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটিরি মানুষ এলএনজি গ্যাস সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।’

তিনি বলেন, ‘এই সংকট কত দিন থাকবে তা বলা মুশকিল।’

লালখান বাজার, কাজীর দেউড়ি, আসকার দিঘিরপাড়, খুলশী, জামাল খান লেন, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, দেওয়ান বাজার, হেম সেন লেন, শুলকবোহর, ঘাট ফরহাদবেগ, বাকলিয়া, চকবাজারসহ নানা এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই শীতে এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।

এলাকার বহু বাসিন্দা বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস সংকট দেখা দেয়।’

ব্যাংকের কর্মচারী শর্মী সেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সকালে উঠে না খেয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেই দেখা যায় চুলা জ্বলছে না। ফলে, কোন ধরনের রান্না বান্না ছাড়াই অফিসে ছুটতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের হোটেল থেকে খাদ্য কিনে খেতে হচ্ছে।’

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন, দক্ষিণ বিভাগ) মু. রইস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে ৮০০-৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হত। এর একটি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। এ কারণে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হলে সংকট অনেকাংশে কেটে যাবে।’

কেজিডিসিএলের অধীনে ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪ জন গ্রাহক রয়েছেন এবং এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫১৬টি পরিবারকে সংযোগ দেয়া হয়েছে।