প্যারিস, ফ্রান্স: ফ্রান্সে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই) অপ্রত্যাশিত জয়ের পথে রয়েছে। দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) জয় আটকানোর প্রচেষ্টায় ব্যাপক সফলতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) দেশটিতে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রচারিত বুথফেরত জরিপের তথ্য মতে, ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২-২১৫টি আসন পেতে যাচ্ছে বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স। তারা পেতে পারে ১৫০-১৮০টি আসন। আর ১১৫-১৫৫টি আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে ন্যাশনাল র্যালি।
ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। সে ক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিয়ে তা করতে হবে। এক্ষেত্রে, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
এ দিকে, ইতিমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স ও উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালির নেতারা। এমনকী সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্টের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন বাম জোটের নেতারা।
ইতিমধ্যে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আগামীকাল প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।’
এ দিকে, বাম জোট জয়ের পথে থাকায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে এর সমর্থকরা।
রাজধানীর স্তালিনগ্রাদ স্কোয়ারে দর্শনের ছাত্র মেরি ডেলি বলেছেন, ‘আমি সত্যিই খুশি। এর একটা তীব্র শক্তি রয়েছে। আমি এর আভাস পাচ্ছি। তবে, আমি চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।’
ফান্সে গেল রোববার অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত মারিন লো পেনের দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)। দলটির বর্ণবাদ ও ইহুদি বিদ্বেষী ইতিহাস থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী থেকে এখনো পর্যন্ত ফ্রান্সের জনগণ তাকে জয়ের মুখ দেখায়নি। তবে, সম্প্রতি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর প্রতি ভোটারদের ক্ষোভের কারণে দলটির সমর্থন বেড়ে যায়।
কিন্তু, ন্যাশনাল র্যালির জনসমর্থন বেড়ে যাওয়ায় ফ্রান্সের উদার ও মধ্যপন্থীরা বিচলিত হয়ে পড়েন। তাই আরএনকে ঠেকাতে বামপন্থীদের জোট এনপিই ও মাক্রোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সের মধ্যে আপস হয়। এ আপস ঠেকিয়ে দিয়েছে আরএনের জয়।
এ দিকে, ন্যাশনাল র্যালির নেতা মারিন লো পেন বলেছেন, ‘তার দলের জয় শুধু বিলম্বিত করা হয়েছে। আজকের এ ফলের মধ্যে তিনি আগামী দিনের জয়ের বীজ দেখতে পাচ্ছেন।’
একই কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল আরএনের সমর্থক ইতিহাসের ছাত্র নোয়া লুডনের কন্ঠে।
তিনি বলেছেন, ‘আরএন ক্ষীপ্র গতির ট্রেন। আমাদের ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। আগামীতে আমাদের জয় আসবে।’