শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬ লাখ মানুষ, মৃত্যু ২৭ জনের

মঙ্গলবার, আগস্ট ২৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৭ জন।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক ই আজম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ সাত হাজার ৪২৯টি। ৭৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫৪১টি।’

তিনি বলেন, ‘মৃত লোকসংখ্যা ২৭ জন, এর মধ্যে কুমিল্লায় দশজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে পাঁচজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে তিনজন। এছাড়া, মৌলভীবাজারে দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন।

ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেয়ায় নয়া কোন এলাকা প্লাবিত হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের যা জানা আছে, নয়া কোন এলাকা প্লাবিত হয়নি।’

দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, ‘সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে, সেগুলো রানিং পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। জনগণের স্বেচ্ছাসেবা ও মানুষের উদ্যম আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে।’

ত্রাণ বিতরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকার সবাইকে সমন্বিত করে ত্রাণের কাজ করছে। যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে, সেখানে যাতে ত্রাণ পরিবহন করা যায়, সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে আরো দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দূরবর্তী সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। উপজেলা স্তরে ত্রাণ মজুদ করা গেছে ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা গেছে। ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে।’

উপদেষ্টা জানান, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৬২০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। সব বাহিনীর সহায়তায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকার সকলকে নিয়ে একসাথে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। সব জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার কয়েক জায়গায় ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি, স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যার্তদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ছয় দিনে নগদ পাওয়া গেছে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ৬০ লাখ টাকার বেশি এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

এছাড়া, দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।