শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ১৫; প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জেলায়

শনিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: স্মরণকালের ভয়ংকর বন্যায় ১২ জেলার ৭৭ উপজেলার ৪৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হল ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষীপুর ও কক্সবাজার। আচমকা এ বন্যায় দুইজন নারীসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গতকাল শুক্রবার (২৩ আগস্ট০ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের চলমান বন্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘বন্যায় দেশের ৫৮৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আট লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ লাখ মানুষ। বন্যায় মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে চারজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষীপুরে একজন ও কক্সবাজারে তিনজন রয়েছেন।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে ফেনী শহর ও জেলার ছয় উপজেলা। জেলার ৯০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় এ জেলার প্রায় সব এলাকা টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও তাদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মোট তিন হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন লোক ও ১৭ হাজার ৮৪৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মোট ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।’

তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তিন কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৫ লাখ টাকা ও এক হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল; কুমিল্লায় ৪৫ লাখ টাকা ও দুই হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল; ফেনীতে ৬২ লাখ টাকা, দুই হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল ও ছয় হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য; নোয়াখালীতে ৪৫ লাখ টাকা, দুই হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য; সিলেটে ৪৫ লাখ টাকা, দুই হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল ও চার হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য; মৌলভীবাজারে ৩০ লাখ টাকা, দুই হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য; হবিগঞ্জে ৩৫ লাখ টাকা, দুই হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চাল ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য; ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১৫ লাখ টাকা, এক হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল; লক্ষ্মীপুরে দশ লাখ টাকা, ৫০০ মেট্রিক টন চাল; খাগড়াছড়িতে দশ লাখ টাকা, ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা, ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।

বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোর প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডের সদস্যরা, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।

ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোষ্ট গার্ড ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে জানানো হয়।