শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত: বাঁ-হাতি ব্যাটার নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটিং ঝড়ে এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে সাত উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। শ্রীলংকার পর বাংলাদেশকে হারিয়ে গ্রুপ থেকে সবার আগে টুর্নামেন্টের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মোসাদ্দেক হোসেনের লড়াকু ইনিংসের সুবাদে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১২৭ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে নয় বল বাকী রেখেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান। ১৭ বলে ৪৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গ করেন নাজিবুল্লাহ।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন শততম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামা বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন মোহাম্মদ নাইম। ইনিংসের তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি মারেন নাইম। প্রথম ওভার খেলে পাঁচ রান তুলেন নাইম। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বিদায় ঘটে নাইমের। আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিবুর রহমানের স্টাম্পের বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন শেষ মুহুর্তে দলে পেয়ে আট বলে ছয় রান করা নাইম।
নাইমের মত দ্রুত বিদায় নেন বিজয়ও। মুজিবের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলটি শর্ট ডেলিভারি ছিল। পুল করতে গিয়ে বল-ব্যাটে লাগাতে পারেন নি বিজয়। এতে বল গিয়ে লাগে তার পায়ে। লেগ বিফোরের জন্য আফগানদের জোরালো আবেদনে, সাড়া দেন নি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে ১৪ বলে পাঁচ রান করা বিজয়কে বিদায় দেয় আফগানরা। ১৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের বোলারদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। পঞ্চম ওভারে পরপর দুই বলে চার মারেন তিনি। তবে ষষ্ঠ ওভারে মুজিবের তৃতীয় শিকার হন সাকিব। মুজিবের স্টাম্পের বল উইকেট থেকে সরে অফ-সাইডে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন সাকিব। ফলে মৃত্যু ঘটে নয় বলে ১১ রান করা সাকিবের ইনিংসের।
পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেটে ২৮ রান তুলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে সেই চাপ আরো বাড়ে। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানের গুগলি ডেলিভারিতে লেগ বিফোর আউট হন মুশফিকুর রহিম। আম্পায়ার মুশিকে আউট না দিলে রিভিউ নেয় আফগানিস্তান। রিভিউতে বিদায় ঘটে এক রান করা মুশপিকের। মুশফিকের বিদায়ের পর আফগানিস্তান বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। উইকেট পতন ঠেকাতে সর্তক হয়ে পড়েন তারা। পরের ২০ বলে কোন চার-ছক্কা মারতে পারেন নি এ দুই ব্যাটসম্যান। দশম ওভারের পঞ্চম বলে আফিফের ব্যাট থেকে চার আসার পর বাংলাদেশের রান ৫০ স্পর্শ করে। তবে ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে রশিদের দ্বিতীয় শিকার হন আফিফ। রশিদের গুগলিতে বোকা বনে যান সেট হওয়া আফিফ। আম্পায়ার লেগ বিফোর আউট দেন আফিফকে। রিভিউ নিয়ে ব্যির্থ হলে বিদায় ঘটে ১৫ বলে ১২ রান করা আফিফের। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ-আফিফ জুটি ২৫ বলে ২৫ রান যোগ করেন। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনের ফের জুটির চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ। উইকেটে গিয়েই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক। একটি করে চার-ছক্কাও মারেন তিনি। অল্পের জন্য ক্যাচের হাত থেকে বেঁচে গিয়ে ছক্কাটি পেয়েছিলে মোসাদ্দেক।
মোসাদ্দেক যখন রানের জন্য মরিয়া ছিলেন, তখন অন্যপ্রান্তে উইকেট ধরে খেলছিলেন মাহমুদুল্লাহ। রানের গতি বাড়াতে ১৬তম ওভারে রশিদের বলে স্লগ সুইপে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ইব্রাহিম জাদরানকে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। ২৭ বল খেলে একটি চারে ২৫ রান করেন তিনি। মোসাদ্দেক-মাহমুদুল্লাহ ৩১ বলে ৩৬ রান যোগ করেন। সেখানে ১৪ বলে ১১ রান অবদান ছিল মাহমুদুল্লাহর। ১৬তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ যখন ফিরেন, তখন বাংলাদেশের রান ৮৯। তাই রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক। তার সাথী ছিলেন মাহেদি হাসান। মোসাদ্দেকের দুইটি চারে ১৭ ও ১৮তম ওভারে যথাক্রমে আট রান করে পায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ফেরার ওভারেও মোসাদ্দেকের একটি চারে আট রান পায় টাইগাররা।
১৯তম ওভারের প্রথম পাঁচ বলে পাঁচ রান তুলেন মোসাদ্দেক-মাহেদি। আর শেষ বলে বাউন্ডারি মারেন মাহেদি। ফলে ঐ ওভার থেকে নয় রান উঠে। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ফের বাউন্ডারি মারেন মাহেদি। আর পঞ্চম বলে রান আউট হন তিনি। তবে ইনিংসের শেষ বলে কোন রান পান নি মোসাদ্দেক। তাই ৪৮ রানের অপরাজিত থাকতে হয় মোসাদ্দেককে। তার ইনিংসের সুবাদে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১২৭ রান করে টাইগাররা। ৩১ বল খেলে চারটি চার ও একটি ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। পুরো ইনিংসে দশটি চার ও একটি ছক্কা মারেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা। চার ওভার করে বল করে ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মুজিব। এ ছাড়া রশিদ ২২ রানে তিন উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে ওনমে প্রথম দুই ওভারে সাত রান পায় আফগানিস্তান। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে জীবন পান আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। সাকিবের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বল লং-অন দিয়ে মারা গুরবাজের বল মাহমুদুল্লাহ ধরতে ব্যর্থ হন। জীবন পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেন নি গুরবাজ। সাকিবের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে স্টাম্প আউট হন গুরবাজ। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে একটি চারে ১১ রান করেন তিনি।
দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের রানের চাকা ঘুরিয়েছেন আরেক ওপেনার হজরতুল্লাহ জাজাই- ইব্রাহিম জাদরান। তবে বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দ্রুত রান তুলতে পারে নি জাজাই-জাদরান। নয় ওভার শেষে এক উইকেটে ৪৫ রান ছিল আফগানিস্তানের। দশম ওভারে জাজাই-জাদরান জুটি ভাঙ্গেন মোসাদ্দেক। জাজাইকে লেগ বিফোর আউট করেন মোসাদ্দেক। রিভিউ নিয়ে উইকেট বাঁচাতে না পারলে তিনটি চারে ২৬ বলে ২৩ রান করা জাজাইর ইনিংসের মৃত্যু ঘটে। জাজাই-জাদরান জুটিতে ৩১ বলে ৩০ রান যোগ করেন। রানের গতি বাড়াতে চার নম্বরে নেমেছিলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। তার ব্যাট থেকে একটি চারও এসেছিল। কিন্তু ১৩তম ওভারে প্রথম বারের মত আক্রমণে এসে নবীকে লেগ বিফোর আউট করেন পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। নয় বলে আট রান করেন নবী।
১৪ ওভার শেষে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের আস্কি রেট দশ অতিক্রম করে। তাসকিন আহমেদের করা ১৫তম ওভারে দুইটি চারে দলকে ১১ রান এনে দেন ইব্রাহিম। মাহেদির পরের ওভারের পঞ্চম বলটি ছক্কা মারেন নাজিবুল্লাহ। ওভারে নয় রান পায় আফগানরা। এ অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে ৪৩ রান দরকার পড়ে আফগানিস্তানের। ১৭তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে দুইটি ছক্কা মারেন নাজিবুল্লাহ। ওভার থেকে ১৭ রান আসে। এতে শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য সমীকরণ দাঁড়ায় ২৬ রান। ১৮তম ওভারে আক্রমণে আসেন সাইফুদ্দিন। ঐ ওভার থেকে ২২ রান তুলে ম্যাচ হাতে মুঠোয় নিয়ে নেন আফগানিস্তানের দুই জাদরান। বাউন্ডারি মেরে ওভার শুরু করেছিলেন ইব্রাহিম। এরপর ঐ ওভারে একটি চার ও দুইটি ছক্কা মারেন নাজিবুল্লাহ।
মুস্তাফিজ-সাইফুদ্দিনের ১৭ ও ১৮তম ওভারে পরপর দুইটি ব্যয়বহুল ওভারের কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ ১২ বলে চার রান প্রয়োজন পড়ে আফগানদের। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে আফগানিস্তানের জয় ও সুপার ফোর নিশ্চিত করেন নাজিবুল্লাহ।
ইব্রাহিম ৪১ বলে চারটি চারে অপরাজিত ৪২ রান করেন। একটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন নাজিবুল্লাহ।
বাংলাদেশের সাকিব-মোসাদ্দেক ও সাইফুদ্দিন একটি করে উইকেট নেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচের বিজয়ী দল সুপার ফোরে খেলবে।