জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: গেল এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি-স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে অবদানের পাশাপাশি মানবিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট সিনেট। এ বিষয়ে সিনেটে রেজুলেশন পাস করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সরকারি সফরকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেনের কাছে (হোটেলে) জর্জিয়ার সিনেটর শেখ রহমানের পক্ষ থেকে রেজুলেশনের অফিসিয়াল কপি হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গেল দুই বছর ধরে জর্জিয়া স্টেট সিনেটে সিনেটর শেখ রহমানের উদ্যোগে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রস্তাব উত্থাপনের ধারাবাহিকতায় এবার রেজুলেশনটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে ঈদ উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কারণে সিনেটর শেখ রহমান রেজুলেশনের কপি নিজে মোমেনকে হস্তান্তর করতে পারেননি। তবে, সিনেটর শেখ রহমানের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারসহ মিশিগানের হ্যামট্রমিক সিটি কাউন্সিলের মেম্বার নাঈম লিয়ন চৌধুরী, আবু মূসা ও মিথুন মাহবুব রেজুলেশনের অফিসিয়াল কপি আব্দুল মোমেনের হাতে তুলে দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি আমেরিকান সিনেটর শেখ রহমানের এ উদ্যোগের জন্য তাকে এবং জর্জিয়ার জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও সরকারের মানবিকতার প্রশংসা করে এমন একটি রেজুলেশন পাস করায় জর্জিয়ার সব জনপ্রতিনিধিকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
বলে রাখা ভাল, জর্জিয়া স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষে গেল ২৯ মার্চ গৃহীত এক রেজুলেশনে (এসআর ৪২৬) বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতি ও মানবিকতার প্রশংসা করা হয়। স্টেট সিনেটর শেখ রহমানের (ডেমক্র্যাট) উত্থাপিত এ রেজুলেশনে বলা হয়, ‘গেল এক দশকের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু যে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ করছে তা নয় বরং শান্তি, প্রগতি ও আঞ্চলিক সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের সফল এ অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিনের সক্রিয় অংশীদার। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সম্প্রতি নয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।’
দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নানা দিক উল্লেখ করে রেজুলেশনে বলা হয়, ‘জর্জিয়া স্টেটের ৩০ সহস্রাধিক বাংলাদেশি আমেরিকানসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। বিগত ৫১ বছরে বাণিজ্য, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সুশাসন ও উন্নয়নসহ আরো অনেকগুলো বৈশ্বিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সরকার পর্যায়ের সম্পর্কের বাইরেও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫১ বছরে সম্পর্ক আরো গভীর ও বিস্তৃত করতে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের মানবিকতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রেজুলেশনে বলা হয়, ‘দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতার সই রেখেছে, তার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করছে এবং এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দেয়া হয়েছে।’
এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য ৬১ মিলিয়ন ডোজ করোনা টিকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছে জর্জিয়া স্টেট সিনেট।