রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বাংলাদেশের ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাইডেনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি

সোমবার, জুন ৫, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশ সরকারের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বন্ধ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ছয় সদস্য। বাইডেন বরাবর লিখিত চিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন রিপোর্ট ও তথ্য তুলে ধরেছেন। তারা এর জন্য দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

গেল ২৫ মে তারা জো বাইডেনকে চিঠি লেখেন। কংগ্রেস সদস্য বব গুড চিঠিটিসহ একটি বিবৃতি নিজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে শনিবার (২ জুন) প্রকাশ করেন। চিঠিতে সই করেছেন কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি (পেনসিলভানিয়া), বেরি মুর (আলাবামা), ওয়ারেন ডেভিডসন (ওয়াহিও), বব গুড (ভারজেনিয়া), টম বারচেট (টেনাসি) ও কিথ সেলফ (টেক্সাস)।

চিঠিতে বাংলাদেশকে অবাধ নির্বাচনের একটি সর্বোত্তম সুযোগ করে দেয়ার জন্য কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সেনাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন উল্লেখ করে কংগ্রেস সদস্যরা চিঠিতে বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে আসা’, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন, বাক্‌স্বাধীনতার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের ওপর হামলার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শত শত উদাহরণ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও তাদের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করেছে। যাতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অস্বীকার করেছে।’

সরকার তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সাংবাদিকদের কারাগারে বন্দী করেছে, বিরোধীদের গুম করেছে ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের লাঞ্ছিত করেছে বা হত্যা করেছে। এ ঘটনা শুধু তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিক্ষোভ করেছে, যা হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের জন্য জনগণের একমাত্র আশা। এর জবাবে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করেছে, এমনকি হত্যা করেছে।

জার্মানির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ডয়েচে ভেলে ও সুইডেনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নেত্রা নিউজের সাম্প্রতিক তদন্তে বলা হয়েছে, ‘র‍্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুমের এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া সম্ভব ছিল না।’

যুক্তরাষ্ট্র এক বছরেরও বেশি সময় আগে র‍্যাবকে একটি ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ও হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য নৃশংসতার জন্য দায়ী একাধিক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনার সরকারের সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণকে ধীর করার জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি। উল্টো তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে আঘাত করার জন্য চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

সবশেষে, চিঠিতে বাংলাদেশকে অবাধ নির্বাচনের একটি সর্বোত্তম সুযোগ করে দেয়ার জন্য কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সেনাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

বব গুডের শনিবারের (২ জুন) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিনিধি স্কট পেরি (পিএ-১০)। এতে সই করেছেন বব গুড (ভিএ-০৫), ব্যারি মুর (এএল-০২), টিম বার্চেট (টিএন-০২), ওয়ারেন ডেভিডসন (ওএইচ-০৮) ও কিথ সেলফ (টিএক্স-০৩)।’