ঢাকা: বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রস্তাব বাতিল করেছে বিটিআরসি।
সম্প্রতি বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমানের সেই করা চিঠিতে এ বিষয়টি জানানো হয়৷
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতের টেলিকম অপারেটর ‘ভারতী এয়ারটেল’-এর সঙ্গে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট ও ফাইবার অ্যাট হোম। প্রস্তাব বাতিলের কারণ হিসেবে বিটিআরসি বলছে, ‘ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে দুর্বল হবে বাংলাদেশ, শক্তিশালী হবে ভারত।’
আসাম-ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য থেকে চেন্নাই সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। আর বর্তমান নেটওয়ার্কে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে সিঙ্গাপুরে সিগন্যাল পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় আট হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব। এতে সময় লাগে প্রায় ৮৭ মিলি সেকেন্ড। কিন্তু, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ব্যান্ডউইথ নিতে পারলে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত দূরত্ব কমে তিন হাজার ৭০০ কিলোমিটার; ল্যাটেন্সি বা সময় কমবে প্রায় ৩৭ মিলি সেকেন্ড। এতে সাত রাজ্যে কম খরচেই উন্নত ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে ভারত।
এই সুযোগ নিতে গত বছর বিটিআরসির কাছে ভারতী এয়ারটেলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে আখাউড়া সীমান্ত হয়ে সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রস্তাব দেয় সামিট ও ফাইবার অ্যাট হোম। তার আগে ২০২২ সালে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে ভারতী এয়ারটেল। এ ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চায় বিটিআরসি। যদিও এই আবেদন নিয়ে আপত্তি তুলে আসছে অন্য অংশীজনরা।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি যে, এ ধরনের ট্রানজিট কখনোই লিগ্যাল হতে পারে না।’
তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতকে ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, ‘ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের অব্যবহৃত প্রায় চার হাজার ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ কাজে লাগানো ঝুঁকিতে পড়বে। বাধাগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের মেটা, গুগল, আকামাই ও অ্যামাজনের মত প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সংযোগ কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘ট্রানজিট আমাদের গাইডলাইনেই নেই।’
তবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে একমত হতে পারেনি সামিট ও ফাইবার অ্যাট হোম।
ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবালের চিফ অপারেটিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মশিউর রহমান বলেন, ‘এখানে আইসিটি আমদানি করে নর্থ-ইস্টার্ন বা সেভেন সিস্টার্স স্টেটে বিক্রির ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ নিয়ে। এটা কীভাবে সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য ক্ষতিকর, তা আমার বোধগম্য নয়।’
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সঙ্গে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো আগের চিঠিও বাতিল করেছে বিটিআরসি।