নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সরকার পতন ও পরবর্তী অস্থিতিশীল অবস্থাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রভাব ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাংলাদেশী মালিকানাধীন ট্রাভেল ব্যবসায়ে। প্রবাসীদের দেশে ভ্রমণ বাতিল, ভ্রমণে গিয়ে দেশে আটকা পড়া ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভ্রমণ বিরতিসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতির মুখে পড়েন এসব ব্যবসায়ীরা।
গ্রীষ্মের এ সময় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জমজমাট ব্যবসায় হওয়ার কথা থাকলেও তা আশানুরূপ না হওয়ায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে দায়ী করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ে লোকসান চলার এ সময়ে নতুন বিভ্রাট ফ্লাইট মিস। ফ্লাইট মিস যাত্রীদের নতুন করে ফ্লাইট বুকিংকের সমস্যা সামাধান করতেও পড়তে হচ্ছে বাড়তি বিড়ম্বনায়।
ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতন ও পরবর্তী অস্থিতিশীল অবস্থা পর্যন্ত প্রবাসীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করে। এ সময় প্রবাসীরা দেশে যাওয়া-আসা যেমন বন্ধ রাখে, তার পাশাপাশি অন্যান্য দেশে ভ্রমণও কমিয়ে দেয়। বুকিং করা অনেকেই বাতিল করেছেন তাদের সামার ট্রাভেল। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার ব্রডব্র্যান্ড ও মোবাইল ইন্টরনেট বন্ধ রাখায় দেশে অবস্থানরহ প্রবাসী ও টুরিস্টদের সঙ্গে কোনরূপ যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি, যেটি ট্রাভেল ব্যবসায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
আমেরকিান ট্রাভেল এজেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি ও কর্ণফুলী ট্রাভেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম হারুন বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমরা যারা বাংলাদেশী ট্রাভেল ব্যবসায়ী আছি, আমাদের ৮০ শতাংশ ব্যবসায় বাংলাদেশের সঙ্গে। সামার ভেকেশানে অনেকেই দেশে যাওয়ার জন্য বুকিং দিলেও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ প্যাসেঞ্জার তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এছাড়াও, যারা সংকটকালীন দেশে ছিলেন তারা ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। যার ফলে বেশিরভাগ যাত্রী ফ্লাইট মিস করেছে। পরে মিস হওয়া ফ্লাইটের টিকেট রিইস্যু করতে আমাদেরও যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জরিমানাও দিতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সংকটকালীন নিউইয়র্কে সামার ভেকেশন ছিল। কিন্তু, দেশ অস্থিতিশীল থাকায় প্রবাসীরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখলেও বেশিরভাগই বুকিং বাতিল করেন। এখন দেশের অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও যে পরিমাণ লোক ট্রাভেল করার কথা, তা হ্রাস পেয়ে এখন ২০ শতাংশে নেমেছে। টিকিট বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।’
এ সংকট কাটিয়ে উঠতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে বলেও মনে করেন সেলিম হারুন।
এস্টেরিয়াস্থ ডিজিটাল ট্রাভেলস এস্টেরিয়ার সিইও নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের আন্দোলন-সংগ্রাম-বিক্ষোভের কারণে মানুষ দেশে যাওয়ার উৎসাহ হারানোয় আমরা সামার ভেকেশনের প্যাসেঞ্জার ধরতে পারিনি। আন্দোলনের শুরু থেকে নয়া সরকার গঠন পর্যন্ত আমাদের টিকেট সেল শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। বর্তমানে সেটা পাঁচ শতাংশে উন্নীত হলেও তা দিয়ে ব্যবসায় ধরে রাখা যাবে না। আমার ১৯ বছরের ট্রাভেল ব্যবসায়ে এ ধস দেখতে হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন হলেও দেশে এখনো অস্থীরতা বিরাজ করছে। পুরোপুরি কাজে ফিরেনি পুলিশ। মানুষ তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখনো বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে আন্দোলন লেগে আছে। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা দেশে যেতে নিরাপদ বোধ করছেন না। দেশ স্থিতিশীল না হলে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ট্রাভেল ব্যবসায়ের এ সংকট দ্রুত কাটবে না।’
গ্লোবাল ট্যুর এন্ড ট্রাভেলের সিইও মো. শাসছুদ্দিন বশির বলেন, ‘ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। তবে, শিগগিরই টিকিটিং ব্যবসায় ভাল হবে বলে আশা করছি।’
রহমানিয়া ট্রাভেলের সিইও এমকে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশে যাত্রী তেমন একটা যাচ্ছেন না। তবে, ওমরাহতে যাচ্ছেন বহু মানুষ।’