ঢাকা: বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সংগঠনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সই করার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছে, তা আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এ প্রতিবেদনে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ তাদের সংবিধানপ্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না। সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না।’
বিবৃতিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেন, ‘জামায়াত সম্পর্কে অত্যন্ত নিন্দনীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের এ রিপোর্ট শুধু অসত্য নয়, বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশে জামায়াত পরিচালিত জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসকে ইন্ধন জোগাবে বলে আমরা মনে করি।’
তারা আরো বলেন, ‘জামায়াত একটি গণতন্ত্রবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল, যারা বাংলাদেশের সংবিধান মান্য করে না। এ কারণে বাংলাদেশের উচ্চতর আদালত ২০১৩ সালে এ দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে দলীয় পরিচয়ে জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। সরকার কখনও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে ’৭১-এর গণহত্যার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামায়াত মানব রচিত সংবিধানে বিশ্বাস করে না। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী আব্রাহাম লিঙ্কনের বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণে ঘোষিত গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে ৮০ বছর আগে লিখেছিলেন ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি কুফরি মতবাদ। যারা এসব মতবাদ প্রচার করবে, তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
এ হেন গণতন্ত্র বিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য যে ওকালতি করছে, তাতে উপমহাদেশসহ পুরো বিশ্বে ইসলামের নামে যাবতীয় সন্ত্রাসের গুরু জামায়াত শুধু অধিকতর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে না, ভবিষ্যতে আমেরিকার মতো দেশে ৯/১১-এর মতো অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনায় ইন্ধন জোগাবে বলে তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
‘২০১৮ সালের ২০ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংক জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন, যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিবরণ দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা গত ৩১ বছর ধরে ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধান বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার জন্য আন্দোলন করছি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট যদি বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র জনমত উপেক্ষা করে জামায়াত তোষণ নীতিতে অবিচল থাকে, তা শুধু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বিপন্ন করবে না, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ পশ্চিমা দেশসমূহের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, জননেতা ঊষাতন তালুকদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অধ্যাপক ডাক্তার কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব), অধ্যাপক ডাক্তার আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ।