নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন নির্বাচিত কার্যকরী কমিটির প্রথম মাসিক সভা রোববার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর পরিচলনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সহ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান জিলানী), কার্যকরি সদস্য হারুন চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান।
সভা শুরু হয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে। এ সময় সোসাইটির সর্বাঙ্গিক মঙ্গল কামনায় ও প্রয়াত সব কর্মকর্তার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সভায় শুরুতেই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন আতাউর রহমান সেলিম। এরপর কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তারা সংগঠনের আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরেন।
সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ সেন্টার/বাংলাদেশ ভবন কেনার বিষয়ে সকলে ঐক্যমত প্রকাশ করেন। প্রকল্পটি কুইন্স এলাকায় বাস্তবায়নের বিষয়ে উপস্থিত সকলে মতামত দেন। এছাড়া, বর্তমান কার্যকরী পরিষদ এই প্রকল্পটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। উপস্থিত সকলে মতামত জানান, শিগগিরই একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে বিশেষ ফান্ড রাইজিং অনুষ্ঠান আয়োজন করার। এ সময় নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ থেকে ভবন কেনার বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়ার ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করা হয়।
যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সম্মিলিতভাবে দিবসটি পালন করা হবে। এ জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন দেওয়ানকে আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খানকে সদস্য সচিব ও কার্যকরী সদস্য জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রধান সমন্বয় করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কামরুল, যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ হাসান জিলানী ও সমন্বয়কারী হাছান খান। এছাড়া, স্মরণিকা উপকমিটি, সাংস্কৃতিক উপকমিটি ও কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। সম্মিলিত এই উদযাপনকে সফল করতে শিগগিরই প্রবাসের সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক, ক্রীড়া, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভার করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন, কবিতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে এবং প্রতি বছরের ন্যায় ‘অক্ষর’ নামে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে।
কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, ইফতার ও দোয়া মাহফিল আগামী ৯ মার্চ নিউইয়র্কের জয়া হলে আয়োজনের বিষয়ে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংগঠনের সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুলকে আহ্বায়ক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারীকে সদস্য সচিব ও মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমি যুগ্ম আহ্বায়ক, আশ্রাব আলী খান লিটন যুগ্ম সদস্য সচিব, মুনসুর আহমদ সমন্বয়কারী। কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা পূর্বের ন্যায় তিনটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে হিফজ বিভাগ, সাধারণ (ছেলে) ও সাধারণ (মেয়ে) বিভাগ। অংশগ্রহণের ইচ্ছুক প্রতিযোগীরা শিগগিরই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
এছাড়াও নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী সিটির আরো দুইটি বরোসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় পৃথকভাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে নেয়া হয়। আগামী সভায় পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হব।
বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ আয়োজনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত বাংলা স্কুলকে আরো যুগোপযোগী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সাথে সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আরো কয়েকটি বাংলা স্কুলের শাখা খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সামগ্রিক বিষয়ে স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক কে দায়িত্ব দেওয়া হয় সবকিছু পর্যালোচনা করে আগামী কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে রিপোর্ট পেশ করলে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্ক্ষা ও সদস্য নিবন্ধনে আরো স্বচ্ছতা আনতে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর অংশ হিসেবে সোসাইটির বর্তমান ওয়েবসাইটকে আরও যুগোপযোগী করে এতে আজীবন ও সাধারণ সদস্য নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করা একই সাথে ফিউনারেল সার্ভিসের অনলাইন নিবন্ধনেরও ব্যবস্থা করতে মতামত দেয়া হয়। যত সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বাংলাদেশের সোসাইটির বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
দীর্ঘ দিন থেকে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব বিল্ডিং কর্তৃক বাংলাদেশ সোসাইটির ভবনের উপর মোটা অঙ্কের আরোপিত ফাইন পরিশোধের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিষয়টি সুরাহা করতে সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সমাধান করতে তাদেরকে অনুরোধ করা হয়।
সোসাইটিকে আরো গণমুখী ও কল্যাণকর সংগঠনে পরিণত করতে সকলের পরামর্শ এবং অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশীরা নানা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদেরকে বিপুল ভোটে পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত করেছেন। এখন আমাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে তাদের এই প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে হবে।’