নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলা নববর্ষ ১৪৪২ উদযাপন করেছে শুদ্ধ শিল্পের নিবিড় চর্চায় ব্রত ঊনবাঙাল। রোববার (২০ এপ্রিল) নিউইয়র্কের একটি রেস্টুরেন্টের অডিটোরিয়ামে জমজমাট আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ করেন তারা।
বেশ ব্যতিক্রম ছিল এর উদ্বোধনী পর্বটি। লাইবেরিয়াতে জন্ম নেয়া লাল টুকটিকে শাড়ি পরা ৯ বছরের তাহিরা এবং বাংলাদেশ থেকে আগত সত্তরের দশকের কবি মুনির সিরাজ যৌথভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সঙ্গে ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, এই সময়ের বরেণ্য কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, ঊনবাঙালের সভাপতি মুক্তি জহির, বর্ষবরণ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক মুন্না চৌধুরী, পরিবেশ কর্মী সৈয়দ ফজলুর রহমান, নারী উদ্যোক্তা সেলিনা উদ্দিন, কম্যুনিটি লিডার আহসান হাবিব, চিকিৎসক মুশফিক চৌধুরী, ঊনবাঙাল-সভা ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট রওশন হক, ঊনবাঙাল-সঙ্গীত বিভাগের প্রধান সৈয়দ মাসুদুল ইসলাম টুটুল প্রমূখ।
কবি মুনির সিরাজ বলেন, ‘ঢাকায় অনেক বড়ো বড়ো অনুষ্ঠান হয় কিন্তু এই অনুষ্ঠানে যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার স্পর্শ পেলাম তা আর কোথাও পাইনি।’
কবি কাজী জহিরুল ইসলাম বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বিভ্রান্ত হবার কোনো সুযোগ নেই যে আজ থেকে ৪৪১ বছর আগে, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে, যখন হিজরি সাল ছিল ৯৯১, তখনই বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। ৯৯১ হিজরি সালকেই ৯৯১ বঙ্গাব্দ ধরে সৌর-পঞ্জিকাটি তৈরি করেন সম্রাট আকবরের অনুরোধে পারস্য জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহুল্লাজ সিরাজী। রাজা শশাঙ্কের আমলে এই পঞ্জিকা শুরু হয়েছিল বলে যে বিভ্রান্তি আছে সেটি নিছকই বিভ্রান্তি, ইতিহাসে এর কোনো সত্যতা নেই।’
আয়োজনে সকলের জন্য পান্তা-ইলিশ, নানান রকমের পিঠা, পায়েশ, ভর্তা, মিষ্টান্ন, চা, নাশতা ও পান সুপারির ব্যবস্থা ছিল। ঊনবাঙালের শিল্পীরা ৬টি দলীয় সঙ্গীত ও বেশ কিছু একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই অনুষ্টজান শুরু হয়। এই পর্বে অংশ নেন মিতা হোসেন, মুক্তি জহির, নজরুল ইসলাম, মুন্না চৌধুরী, রেণু রোজা, সাঈদা রুনু, নাসির উদ্দিন, চমক ইসলাম, সৈয়দ মাসুদুল ইসলাম টুটুল প্রমূখ। তবলায় সঙ্গত করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তবলা শিল্পী দেবু চৌধুরী।
দলীয় সঙ্গীতের পরেই ছিল কবিতা আবৃত্তি। এতে অংশ নেন আহসান হাবিব, দিমা নেফারতিতি, সুমন শামসুদ্দিন, মুক্তি জহির, মুন্না চৌধুরী, জিএম ফারুক খান, ফরিদা ইয়াসমিন, মোহাম্মদ শানু, রাশিদা আক্তার।
স্বরচিত কবিতা পাঠ পর্বে অংশ নেন কাজী জহিরুল ইসলাম, শেলী জামান খান, দেওয়ান নাসের রাজা, রেণু রোজা, রওশন হক, সালেহা ইসলাম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
কিসসা বলেন গুলশান আরা চৌধুরী এবং কাওসার পারভীন চৌধুরী। পুঁথিপাঠ করেন সৈয়দ রাব্বী। একটি কথিকা পড়ে শোনান ওয়াহেদ হোসেন।
লুডু, কুতকুত এবং ধাপ্পা খেলারও ব্যবস্থা ছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল অনুষ্ঠানস্থলের সাজ-সজ্জা। ঝাঁকি জাল, বাবুই পাখির বাসা, হুক্কা, হারিকেন, পলো, নানান রকমের মুখোশ ইত্যাদি দিয়ে সাজানো আঙিনাটি যেন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কোনো এক নিভৃত গ্রাম।
বৈশাখী ভোজের পরে মরিয়ম মারিয়ার গানে সমবেত দর্শক-শ্রোতা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করেন। দর্শকদের উদ্দাম নৃত্য এবং মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে মরিয়ম একে একে ৬টি গান পরিবেশন করেন। এরপর একক গান করেন সৌভিক, রূমা চৌধুরী, মোহাম্মদ শানু, নজরুল ইসলাম, মিতা হোসেন এবং সৈয়দ মাসুদুল ইসলাম টুটুল।
সুশৃঙ্খলভাবে খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করেন মানবাধিকার কর্মী কাজী ফৌজিয়া, মুন্না চৌধুরী এবং ড্রামের একদল সদস্য।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উচ্ছাস ও সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. ওয়াজেদ খান, ড. ইমরান আনসারী, সাংবাদিক শেখ সিরাজ, মমতাজ খান, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আল আমিন রাসেল, অধ্যাপক ইমাম চৌধুরী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রীটা রহমান, অধ্যাপক হেলেন সিরাজ, সাদিক খান।