গাজা সিটি, ফিলিস্তিন: গাজায় মৃত্যু বেড়ে এক হাজার ২০০-এ দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ‘শনিবার (৭ অক্টোবর) হামাস জঙ্গিদের বিধ্বংসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল ওই এলাকায় বিমান হামলা শুরু করে। এরপর থেকে এক হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের মোট মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৫০০-এ দাঁড়িয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরার।
এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছিল, ‘হামাসের বন্দুকধারীরা এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেছে ও মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এক ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহতে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬০০ জনে।’
হতাহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে গাজাজুড়ে হাসপাতালগুলো সমস্যায় পড়েছে। জনপদটির বহু এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ইসরায়েলের প্রায় বিরতিহীন বিমান ও গোলার হামলা থেকে বাঁচতে অনেক ফিলিস্তিনি গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে, হাসপাতালগুলো পরিণত হয়েছে কার্যত শরণার্থীশিবিরে।
এ দিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োআভ গালান্ত সেনাদের স্থল অভিযানের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে হামাসকে গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ইয়োআভ গালান্ত বলেছেন, তিনি সেনাদের ওপর থেকে সব বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছেন। গাজা কখনোই আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে না।’
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থানীয় সময় বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকালে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কার্যত বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে পুরো অঞ্চল।’
শনিবার (৭ অক্টোবর) যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বুধবার (১১ অক্টোরব) পর্যন্ত হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও আড়াই হাজারের বেশি আহত হয়েছে; তাদের মধ্যে ১৬৯ জন ইসরায়েলি সেনা রয়েছে। অন্য দিকে, ইসরায়েলের বাহিনীর হামলায় ২৬০টি শিশুসহ এক হাজার ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘তাদের যে লক্ষ্য দেয়া হয়েছে, তা পূরণ করতে গাজার কাছাকাছি কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গাজার চেহারা হবে আরো খারাপ।’
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘গাজার বেসামরিক লোকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে ইসরায়েল ও মিসরের সাথে আলোচনা চলছে।’
গাজায় মানবিক সংকট: ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় হাজারের বেশি ভবন গুঁড়িয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। পানি, খাবার ও বিদ্যুতের অভাবে দুর্ভোগ নেমে এসেছে গাজাবাসীর জীবনে। জীবন বাঁচাতে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতাল ও স্কুলে। কিন্তু, সেখানেও হামলা হচ্ছে। এক কথায় চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে জনপদটিতে। ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি শল্যচিকিৎসক ঘাসান আবু সিত্তা বলেন, ‘আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, তা শরণার্থীশিবিরে পরিণত হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে লোকজন হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছে।’ গাজার বাসিন্দা কামাল মাশারাওয়ি বলেন, ‘খুবই কঠিন পরিস্থিতি। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই।’
ইসরায়েলের হামলায় কামালের সন্তানরা আহত হয়েছে। পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। ইন্টারনেট না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ৮৩টি স্কুলে আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই এসব শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। পানি, জ্বালানি ও খাবারের জন্য ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীল গাজা।
হামাসের শনিবারের (৭ অক্টোবর) হামলার উত্তরে কড়া অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। এতে মানবিক সংকট আরো তীব্র হয়। গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউ। সংস্থাটি বলছে, ‘এটা যুদ্ধাপরাধ।’