ঢাকা: জাতীয়াতাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের ব্যাপারে আগামী ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার (৩০ আগস্ট( এ আদেশ দেন।
‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে দেয়া বক্তব্যকে ইস্যু করে আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছিলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী সংগঠন। এসব কর্মসূচি আদালত অবমাননার সামিল উল্লেখ করে বিএনপিপন্থী সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দাখিল করা হয়। আদালতে বুধবার (৩০ আগস্ট) আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা সাত আইনজীবী হলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, এডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি এডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বুধবার (৩০ আগস্ট) আপিল বিভাগে শুনানির জন্য কার্য তালিকায় ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে রোববার (২৭ আগস্ট) বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার ও লিফলেটসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।
আবেদনের পক্ষের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষের শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিম কোর্ট। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিচারকদের নিয়ে বক্তব্য কাম্য নয়। সকলেরই সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা।’
বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চের বিচারপতিরা আসন গ্রহণের পর ক্রমানুসারে বিষয়টি ডাকা হলে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথী শুনানির জন্য ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অবমাননার আবেদনের ওপর অবকাশের পর শুনানি হবে।’ পরে আদালত আগামী ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য রেখে আদেশ দেন। একই সাথে হাইকোটের (১৫ বিএলটি) স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটিসহ অবকাশ শেষে ৮ অক্টোবর নিয়মিত আদালত বসবেন।
এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী বুধবার (৩০ আগস্ট) সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি এমএ মতিনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়ের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে বলেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের সারাংশ অনুসারে আদালত প্রাঙ্গণে কোন ঘেরাও, প্রিকেটিং, সমাবেশ অথবা এমন কোন কাজ, যা বিচারকাজে বাধা দেয়, তা করতে পারবে না। আদালত প্রাঙ্গণে কোন ধরনের মিছিল-মিটিং, প্রিকেটিং করতে পারবে না। এ ছাড়া, যারা আদালত অবমাননা করবে, তারা বাংলাদেশের কোন আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না, ওই রায়ে রয়েছে।’
এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় ছিল, সব আদালত প্রাঙ্গণে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, মিছিল-মিটিং করা যাবে না। এই আদেশ অমান্য করে কোন কাজ করলে আদালত অবমাননা হবে। অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের আদালতের কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন।’