শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবির মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে পুরো জাতি। ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে স্মৃতির মিনারে জড়ো হন আপামর জনতা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি নানা শ্রেণিপেশার মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ বেদি। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কাঙ্খিত লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানান অনেকে।

একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে বাঙালির শোক আর অহংকারের এ মিনার।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কামরুল ইসলাম, এএইচএম খাইরুজ্জমান লিটন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম ও দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন।

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, তিন বাহিনীর প্রধানরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শহীদ মিনারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। পরে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

তারও পরে পুলিশ মহা পরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা, র‌্যাব, বিজিবি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলমনাই এসোসিয়েশন, জাসদের নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর আগে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মধ্য রাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন। এ সময় হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। একই সাথে তারা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের ও অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবি জানান।

এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণ ফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সকালে দলের পক্ষ থেকে প্রভাতফেরী সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনেক বিদেশী নাগরিককে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ছিল সরকারী ছুটির দিন। ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাতফেরি সহকারে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, জারি হয় ১৪৪ ধারা, ভেঙে ফেলা হয় শোষকের শৃঙ্খল। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে বিদীর্ণ হয় বুক। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এ দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ সব মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকার স্কুল-কলেজ ও পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সবাই। এ শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বেঁচে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। এসব আয়োজনে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।