বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

বিনামূল্যে পাওয়া ফ্ল্যাট নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ

সোমবার, জানুয়ারী ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

লন্ডন, ব্রিটেন: ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী। অথচ দুই বছর আগে টিউলিপ দাবি করেছিলেন- তার বাবা-মা তাকে এই ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। এমনকি এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন টিউলিপ। সংবাদ ডেইলি মেইল, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের।

লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে পাওয়ার বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন দুর্নীতি দমন মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক, এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই শনিবার (৪ জানুয়ার) রাত থেকে টিউলিপের ওপর পদত্যাগের চাপ বেড়েছে।

মূলত টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রসের কাছে একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছিলেন কোন অর্থ না দিয়েই। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে। মূলত পূর্বে অপ্রকাশিত ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ফাইলিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি এই তথ্য সামনে এনেছে।

লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় অবস্থিত দুই শয্যাকক্ষের সেই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।

এক লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। ফ্ল্যাটটি বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি। কারণ একই বছরের আগস্টে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।

দ্য মেইল অন সানডে বারবার টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসা করেছিল, তাকে যে দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে – যার মূল্য এখন ৭ লাখ পাউন্ড – সেটির মালিক আগে ছিলেন তার বাংলাদেশি স্বৈরশাসক খালার (শেখ হাসিনার) সাথে সম্পর্কযুক্ত একজন ডেভলপার ব্যবসায়ী।

তবে টিউলিপ সিদ্দিক তখন এটি তাকে উপহার হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেন। এর পরিবর্তে তিনি জোর দিয়ে দাবি করেছিলেন- তার বাবা-মা তার জন্য এটি কিনে দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও এমওএস-কে (মেইল অন সানডে) হুমকিও দিয়েছিলেন।

তবে এখন লেবার পার্টির বেশ কিছু সূত্র নিশ্চিত করেছে যে- লন্ডনের কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি প্রকৃতপক্ষে একজন ডেভেলপার তাকে “কৃতজ্ঞতা” হিসেবে দিয়েছিলেন।

মূলত টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি ও পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার (৪ জানুয়ার) রাতে টোরি এমপিরা টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।’

টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না।’

অন্যদিকে, শ্যাডো হোম অফিস মিনিস্টার ম্যাট ভিকার্স এমপি বলেছেন, ‘সরকারের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য, আর সেই মন্ত্রী যখন (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হন তখন তা আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ।’

মূলত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ডেভেলপারের কাছ থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ায় টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর চাপ বাড়াতে পারে। যদিও গত মাসে বাংলাদেশে পৃথক দুর্নীতির তদন্তে টিউলিপের নাম আসার পর দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি। আর এই অভিযোগ যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ, সিটি মিনিস্টার হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকের ভূমিকা দেশটিতে আর্থিক দুর্নীতি মোকাবিলায় প্রশ্ন তুলতে পারে।