রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫

শিরোনাম

বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া: কানাডা, মেক্সিকোর ওপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করলেন ট্রাম্প

শুক্রবার, মার্চ ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য আরোপিত কঠোর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ববাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ওই তিন দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে। খবর এএফপির।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর, বিশ্ববাজারে তীব্র মন্দাভাব দেখা দেয়। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে ও স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।

যদিও ট্রাম্প এই শুল্কের ফলে বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে তার সিদ্ধান্তের সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন, তবে তিনি উত্তর আমেরিকার আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতাভুক্ত আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন।

এছাড়া, ট্রাম্প কানাডার পটাশ সারের ওপরও শুল্ক কমিয়ে দেন। পটাশ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সার, যা যুক্তরাষ্ট্রে কম উৎপাদিত হয়।

এই শুল্ক বিরতি আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর এক দিন আগে গাড়ি নির্মাতা শিল্পের জন্যও সাময়িক শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছিল হোয়াইট হাউজ।

ট্রাম্প বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও অনুকূল করে তুলবে।’

তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘২ এপ্রিলের পর নতুন শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করা হবে। ওইদিন ‘প্রত্যুত্তরমূলক শুল্ক’ নীতির আপডেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প, যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অন্যায্য বাণিজ্যিক চর্চার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।’

এছাড়া ট্রাম্প বলেন, ‘স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই, যা আগামী সপ্তাহে কার্যকর হবে।’

অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া:

ক্যাটো ইনস্টিটিউটের জেনারেল ইকোনমিক্সের সহ-সভাপতি স্কট লিন্সিকোম বলেন, ‘ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ‘‘অর্থনৈতিক বাস্তবতার স্বীকৃতি’’।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুল্ক সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটায়, শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর পড়ে এবং বাজার এই অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না।’

শুল্কের রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য:

ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার মিত্র ও প্রতিপক্ষদের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান বাণিজ্য অংশীদার কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে অবৈধ অভিবাসন ও মাদক চোরাচালান ঠেকানোর যুক্তি দেন।

তবে, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ ফেন্টানিল সরবরাহের ১ শতাংশেরও কম যোগান দেয় এবং এটি অবৈধ অভিবাসনের তুলনামূলকভাবে ছোট উৎস বলে মার্কিন ও কানাডিয়ান সরকারি তথ্যানুযায়ী জানা যায়।

এদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের ফেন্টানিল সরবরাহে ভূমিকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘এটি মূলত অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যা শুল্ক দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির নতুন রেকর্ড:

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক মূল্যস্ফীতি বাড়াবে না এবং দাম বৃদ্ধির প্রভাব ‘সাময়িক’ হবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি জানুয়ারিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।’

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) প্রকাশিত মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির বাণিজ্য ঘাটতি ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সোনার আমদানি বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য শুল্কের আগে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করায় এই ঘাটতি আরও বেড়েছে।’