ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত পেনশন প্রস্তাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৩ আগস্ট) গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় ফোরামের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১ জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার নয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এ স্কিমে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও অন্যান্য কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা নতুন পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ করেছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এর বিরুদ্ধে কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। তাদের আন্দোলনের ফলে সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত স্কিম চালু হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বহু কমে যাবে। তবে, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গেল বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘যদি আমরা ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের আওতায় আনতে পারি, তাহলে সবাই একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আসবে, যা ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে গেল ২৯ জুলাই বিকালে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, ‘প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে দশ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া হবে। যেটা আগে কাটা হত না। এ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পাঁচ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সেটা সুস্পষ্ট করা হয়নি। সব থেকে বড় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫-৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতা নতুন প্রত্যয় স্কিমে দেয়া হবে না।
তারা আরো বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে। এ প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে না। আর তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা ‘প্রত্যয় স্কিম’ থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন।