মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

বৈষম্যহীন নতুন বছর ২০২৫

রবিবার, জানুয়ারী ৫, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

আবছার উদ্দিন অলি: নতুন বাংলাদেশে, নতুন আশা, নতুন ভালোবাসা নিয়ে এসেছে নতুন বছর ২০২৫ সাল। বছরের শুরুতেই নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তাই, এবারের নতুন বছরটি এ দেশের মানুষের জন্য ভিন্ন আমেজের বার্তা নিয়ে আসছে। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী। দিন শেষে আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়েই আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ২৪’র বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষ আবার কথা বলার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। এসেছে নতুন বছর, নতুন দিনের শপথে।

তরুণ প্রজন্মই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। তরুণরা বাংলাদেশকে নতুন করে পথ দেখিয়েছে। অর্থনীতিসহ সবকিছুতেই তরুণরা নেতৃত্বে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে প্রজন্ম জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছে, সেই প্রজন্মই বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। তরুণদের নিয়ে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সমগ্র পৃথিবী নতুন করে ভাবছে, আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তরুণরা জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে একটি নতুন পথ দেখিয়েছে। ফলে, এই তারুণ্য বাংলাদেশকে পরবর্তী কোথায় নিয়ে যাবে, পৃথিবী এখন সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। তারুণ্যের ভিতরে যে উদ্যম, স্পৃহা, সচেতনতা রয়েছে, এসব গুণাবলীকে যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবে। জুলাই অভ্যুত্থানে সকলেই রাস্তায় নেমে এসেছিল। এক দিকে, ছিল দেশ মাতৃকা, অপরদিকে মৃত্যু। মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু যে কোনো একটিকে বেছে নিয়ে আমাদের লড়তে হয়েছিল।

প্রতিবাদী মানস আর পর্বতসম আত্মবিশ্বাস বুকে নিয়ে একটি বৈষম্যহীন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল এ দেশের দুর্জয় তারুণ্য। যে স্বপ্নের সারথি হয়েছিল এ দেশের সাধারণ মানুষ। সাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে, অধিকার আদায়ের নির্ভীক সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের সাথে ছুটে এসেছিল তাদের অভিভাবক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কারখানার শ্রমিক, দিনমজুর, এমনকি দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটিও। তাদের সংগ্রাম ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণ, নির্যাতন আর বিচারহীনতার প্রতিবাদে।

ছুটে চলেছি ঘর সংসার আর পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, ডলার সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাভাব, মূল্যস্ফীতি, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে মানুষের জীবন-যাপন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের বিরাট সামঞ্জস্য। সেই সাথে মধ্যবিত্তের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদেরকে সব সমস্যাকে মোকাবিলা করে এই সময় কাটিয়ে নতুন আশা নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছর ২০২৫ সাল।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত আসংখ্যাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাভাব আর সেটাকে মাথায় রেখে আমাদের জীবন জীবিকা সচল রাখতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া সব নিয়মনীতি মেনে নতুন বছরে নতুন করে এগিয়ে যাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। অনেক স্মৃতি জাগানিয়া ও আলোচিত বছর ছিল ২০২৪ সাল। ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে আমরা রাষ্ট্র প্রধান পেলাম। ড. মুহাম্মদ ইউনুস আমাদের সেই স্বপ্নের প্রত্যাশাটি পূরণ করেছেন। কথায় আছে যৎ কর্ম তৎ ফল। সুতরাং, এই ইংরেজী নববর্ষটি কি রকম হওয়া উচিত এই বিষয়ে নিছক কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে আমার সব কর্মে বলনে চলনে দায়িত্ব পালনে আগামী দিনগুলোর প্রতিটি মুহুর্তকে সততার সাথে সৃজনশীল করে তুলতে চাই।

গেল বছরের হিসেব খাতায়, যোগের চেয়ে বিয়োগের অংকটাই এখন বড়। সে যাই হোক আশা করি, নিরাশার দোলা চালেইতো জীবন চলে। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে পর্যন্তইতো মানুষ আশায় বাঁচে। আমরাও মানুষ, তাই ক্ষেত্র বিশেষে অতীতের স্বীয় ব্যর্থতার গ্লানিকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নতুন বছরের পথ পরিক্রমনে যাত্রাকালে চেনা এ পৃথিবীটার সবার জন্যে সুখ কামনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ ছাড়া, চৌচির কোন মাঠ ফসলের চৈতি ক্ষরায় কান্না কারো কোন দুঃখ ব্যাধি জ্বরায় নির্ঝর বারিধারা বিমূর্ত হাসি আশার একান্ত কাম্য। অনোদার যুদ্ধ বারুদের মানুষ মারায় নিত্য দিবারাত সন্ত্রাস জীবন পাড়ায় শান্তির প্রচ্ছায়া চিরায়ত খুশী আমাদের প্রানান্ত চাওয়া। দেশের মানুষ অস্থিতিশীল পরিবেশকে পেরিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা করি।

নতুন কোন দূর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে যাওয়া অসহায় মানুষদের কান্না আর দেখতে চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো নতুন করে কারো প্রাণহানি ঘটুক, আমরা দেখতে চাই না, সড়ক দুর্ঘটনা, বাল্য বিবাহ, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, ডিভোর্স, পারিবারিক কলহ, খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং, মাদক সেবন, কিশোর গ্যাং, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনলাইন প্রতারণা। আসুন সবাই মিলে নতুন বছরে নতুন করে সুন্দরভাবে বাঁচতে ঐক্যবদ্ধ হই। সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। তবেই আমরা ফিরে পাব সেই “স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ”। রাষ্ট্র কিংবা কোন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবহেলায় নতুন কোন দূর্ঘটনায় কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়, কোন স্ত্রী যেন স্বামী- সন্তান হারা না হয়। এই কামনা করি। নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সোনালী আভায় লাখো গোলাপের সুভাসে আন্দোলিত হোক ১৬ কোটি বাঙালি।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি রইল সমবেদনা আর ভালোবাসা। পুরোনকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেয়াই মানুষের সহজাত ধর্ম। আবহমান কাল ধরে মানুষ পুরাতনকে শুকনো ঝরা পাতার মত ত্যাগ করে নতুন কুঁড়ির উদগমন হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে। ইংরেজী নতুন বছর ২০২৫-কে জানাই সাদর সম্ভাষণ। এক বুক অনাবিল আনন্দ নিয়ে স্বাগত জানাই নতুন বছরের নবীন প্রভাতের নবীন সূর্যকে। ২০২৫ সালে যেন সব বৈষম্যহীন পরিবেশকে পেছনে ফেলে কাঙ্খিত, মনোরম, ভালবাসায় এক গুচ্ছ প্রত্যাশা ও আশ্বাস কে খুঁজে পায় অনায়াসে। ইংরেজি নতুন বছর শুরুর দিন থেকে আশার আলোতে প্রত্যাশার পদধ্বনি বেজে উঠুক। সবকিছুর পরও সুখ শান্তির প্রত্যাশায় স্বাগত বৈষম্যহীন নতুন বছর ২০২৫ সাল।

লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার