পাল্লেকেলে, শ্রীলঙ্কা: ব্যাটিং ব্যর্থতায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকার কাছে হার দিয়ে এশিয়া কাপের ১৬তম আসর শুরু করল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) শ্রীলংকার কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে নাজমুল হোসেন শান্তর লড়াকু হাফ-সেঞ্চুরি সত্বেও ৪২ দশমিক চার ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ১২২ বলে সাতটি চারে ৮৯ রান করেন শান্ত। জবাবে ৩৯ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৬৫ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলংকা।
শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ ম্যাচে দেশের ১৪৩তম ওয়ানডে খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি ওপেনার তানজিদ হাসানের। কিন্তু, অভিষেকটা রাঙাতে পারেননি তানজিদ। মোহাম্মদ নাইমের সাথে ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় ওভারে শ্রীলংকার স্পিনার মহেশ থিকশানার দ্বিতীয় বলে লেগ বিফোর আউট হন তানজিদ। রিভিউ নেয়ার সুযোগ থাকলেও, আম্পায়ারের সিদ্বান্ত মেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে শূন্য হাতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দুই বল খেলা তানজিদ। দেশের ১৬তম ওয়ানডে ব্যাটার হিসেবে অভিষেকেই ‘ডাক’ মারলেন ২২ বছর বয়সী তানজিদ।
শুরুতেই ওপেনারকে হারানো ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন নাইম ও তিন নম্বরে নামা শান্ত। উইকেট সেট হওয়ার চেষ্টা করেও বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার করা অষ্টম ওভারে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করায় পয়েন্টে পাথুম নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দেন নাইম। তিনটি চারে ১৬ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে ৩৮ বলে ২১ রানের জুটি গড়েন নাইম। নাইমের বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক সাকিব। তখন ২৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। এ অবস্থা থেকে দলকে চাপমুক্ত করতে পারেননি টাইগার দলনেতা। শ্রীলঙ্কান পেসার মাথিশা পাথিরানার বল কাট করতে গিয়ে ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি সাকিব। বল তার গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষকের হাতে জমা পড়লে বিদায় নিতে হয় ১১ বলে পাঁচ রান করা সাকিবকে। ৩৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন তাওহিদ হৃদয়। দেখেশুনে খেলে বড় জুটির চেষ্টায় সফল হন তারা। ২৩তম ওভারে জুটিতে ৫০ পূর্ণ করেন শান্ত-হৃদয়। পরের ওভারে নিজের মুখোমুখি হওযা ৬৬তম বলে ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন দুই রানে জীবন পাওয়া শান্ত। একই ওভারের শেষ বলে শান্ত-হৃদয়ের জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। রিভিউ নিয়ে শানাকার শিকার হওয়ার আগে ৪১ বলে ২০ রান করেন হৃদয়। চতুর্থ উইকেটে ৮০ বলে ৫৯ রান তুলেন শান্ত ও হৃদয়। দলের রান তিন অংকে পৌঁছানোর আগেই উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। শান্তর সাথে আরো একটি বড় জুটির পরিকল্পনায় ছিলেন মুশি। ভাল করার ইঙ্গিত দিয়েও জুটিতে ৩২ রান তুলে বিচ্ছিন্ন তারা। ৩৩তম ওভারে পাথিরানার বাউন্সারে আপার কাট শটে ডিপ থার্ড ম্যানে দিমুথ করুনারত্নেকে ক্যাচ দেন একটি চারে ১৩ রান করা মুশফিক।
দলীয় ১২৭ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মুশফিক ফেরার পর বাংলাদেশের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন শান্ত। অন্য প্রান্ত দিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ পাঁচ ও মাহেদি হাসান ছয় রানে আউট হলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন শান্ত। কিন্তু, থিকশানার করা ৪২তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারির ক্যারম বল ঠিকমত খেলতে না পেরে বোল্ড হন সাতটি চারে ১২২ বলে ৮৯ রান করেন শান্ত। দলীয় ১৬২ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে শান্ত ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। ৪২ দশমিক চার ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ৩২ রানে চার উইকেট নেন পাথিরানা। ১৯ রানে দুই উইকেট নেন থিকশানা।
১৬৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতে বাংলাদেশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীলংকা। তৃতীয় ওভারে দিমুথ করুনারত্নকে এক রানে বোল্ড করেন পেসার তাসকিন। চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন পেসার শরিফুল। উইকেটের পেছনে মুশফিকের দারুন ক্যাচে ১৪ রানে আউট হন নিশাঙ্কা। ১৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকা জুটির সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। সাবধানে খেলতে থাকা মেন্ডিস (৫) সাকিবের বলে বোল্ড আউট হলে স্কোর বোর্ডে ৪৩ রান তুলতেই তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে টাইগার শিবির। তবে, চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা। ২২তম ওভারে শ্রীলংকার রান ১০০তে নেন তারা। ৫৯ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সামারাবিক্রমা।
সামারাবিক্রমা-আসালঙ্কার জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বোলাররা। অবশেষে স্পিনার মাহেদির হাত ধরে আসে ব্রেক-থ্রু। ৩০তম ওভারে মাহেদির বলে স্টাম্প আউট হন ৭৭ বল খেলে ছয়টি চারে ৫৪ রান করা সামারাবিক্রমা। আসালঙ্কার সাথে ১১৯ বলে ৭৮ রান যোগ করে শ্রীলংকাকে জয়ের পথে রেখে যান তিনি। সামারাবিক্রমা যখন ফিরেন, তখন ছয় উইকটে হাতে নিয়ে জয় থেকে ৪৪ রান দূরে শ্রীলংকা। ক্রিজে নতুন আসা ব্যাটার ধনাঞ্জয়াকে দুই রানে বোল্ড করেন সাকিব। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ। কিন্তু, ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রান তুলে ৬৬ বল বাকী থাকতে শ্রীলংকাকে জয়ের স্বাদ দেন আসালঙ্কা ও অধিনায়ক শানাকা। নবম অর্ধশতক তুলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় আসালঙ্কা ৬২ ও শানাকা ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের সাকিব দশ ওভারে ২৯ রানে দুই উইকেট নেন। একটি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন-শরিফুল ও মাহেদি।
আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে গ্রুপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আফগানদের কাছে হেরে গেলেই এশিয়া কাপ থেকে বিদায় ঘন্টা বাজবে সাকিবের দলের।