দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বড় পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে দুইটি ইউনিটে ৩২৭ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর বড় পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াজেদ আলী মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকাল তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘বড় পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট থেকে ২৫০ হতে ২৭৫ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হত। দেশে ডিজেল চালিত ছোট-ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ডিজেল সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কিছুটা বিঘ্নিত হওয়ায় লোডশেডিং চলছে। সে কারণেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে এ কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অপর একটি ইউনিট মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। এ ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়ার্ট। আজ উৎপাদন শুরুতেই ৭৭ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দুইটি ইউনিট থেকে ৩২৭ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উপাদন করে আজ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, বড় পুকুরিযা কয়লা খনির নতুন ফেজের উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় কয়লা উত্তোলন গত ৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় রেখে দফায় দফায় বৈঠক চলমান রয়েছে। নতুন ফেজ থেকে উন্নয়ন কাজ সোমবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে শুরু করা হয়েছে। ওই নতুন ফেজ থেকে পুরোদমে কয়লা উত্তোলন হলে বড় পুকুরিয়ার তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ইউনিটের মধ্যে যে দুইটি ইউনিট মঙ্গলবার থেকে চালু রয়েছে ওই দুইটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন চলমান রাখতে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সূত্রটি জানায়, বর্তমানে যে দুইটি ইউনিট চালু আছে, তার প্রয়োজন প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ৫০০ টন কয়লার। খনিতে বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন কয়লা মুজদ রয়েছে। নতুন ফেজের উন্নয়ন থেকে যে পরিমাণ কয়লা উত্তোলন হবে, সে কয়লাসহ মজুদ কয়লা দিয়ে পুরোদমে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়া পর্যন্ত ইউনিট দুইটি চালু রাখতে খনি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
দিনাজপুর বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত জুলাই মাসের ২৫ থেকে ৩১ পর্যন্ত কয়লা খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিন দফায় স্বাস্থ্যগত পরীক্ষায় ৫২ জন চীনা ও ৪৪ জন দেশী শ্রমিকসহ ৯৬ জন শ্রমিককে খনির বাহিরে আইসেলেশনে নিরাপদ রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফলে এ ধরনের সংকট থাকায় সাময়িকভাবে কয়লা খনির নতুন এক হাজার ৪০৬ নম্বর ফেজের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গত ৭ দিন ফের শ্রমিক সংকট দূর করে সোমবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটা থেকে নতুন এক হাজার ৪০৬ নম্বর ফেজ থেকে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে কয়লা খনির নতুন ফেজের আংশিক উত্তোলন শুরু করা হয়। সোমবার (৮ আগস্ট) কিছু চীনা ও দেশী শ্রমিক মিলে সন্ধ্যা সাতটা থেকে নতুন ফেজের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল আটটা থেকে ৩০০ চীনা শ্রমিক ও ২৩৮জন দেশী শ্রমিকসহ ৫৩৮ জন শ্রমিক নতুন এক হাজার ৪০৬ নম্বর ফেজের উন্নয়নের কাজ শুরু করে। ফলে সোমবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটা থেকে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুর দুইটা পর্যন্ত এ ফেজের উন্নয়নে ৮০০ থেকে ৯০০ টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে।
বুধবার (১০ আগস্ট) এ ফেজের উন্নয়নে আরো ১০০ শ্রমিক যোগদান করবেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এভাবে উন্নয়নের কাজ চলমান রাখতে পারলে ১৬ আগস্ট থেকে পুরোদমে কয়লা উত্তোলন করা যাবে। পুরোদমে কয়লা উত্তোলন করতে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ সব ধরনের মনিটরিং ও কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানির সাথে কয়লা উত্তোলন পুরোদমে কাজ শুরু করতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। পুরোদমে কয়লা উত্তোলন হলে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে। খনিতে থেকে কয়লা উত্তোলন স্বাভাবিক থাকলে বড় পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালু রেখে ৫০০ মেগাওয়ার্টের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা যাবে।