ঢাকা: অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ভারতের ঋণে (লাইন অব ক্রেডিট) চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে ভারতের যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, তা বড় প্রকল্প ও আমরা সেগুলো চালিয়ে যাব। কারণ, সেগুলো ছোট প্রকল্প নয় ও আমরা আমাদের সুবিধার জন্য আরেকটি বড় প্রকল্প নেব।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেখা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তাকে (ভারতীয় হাইকমিশনার) আশ্বস্ত করেছি যে, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ একটি খুব ভাল জায়গা। তারা (ভারতীয় পক্ষ) ব্যাপারটি বিবেচনায় নিয়েছে ও তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা ভারত সরকারকে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভবিষতে সহযোগিতা জোরদারের অপেক্ষায় রয়েছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘বৈঠকে তিনটি ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থ ছাড় সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ভারত পাশের দেশ ও বাংলাদেশের একটি বড় প্রতিবেশী উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যের বহু ক্ষেত্র রয়েছে। তারা বিদ্যমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা কিভাবে বাড়ানো যায়- সে ব্যাপারে আলোচনা করেছেন।’
বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট প্রকল্পের ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের অর্থায়নে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সেগুলো দেশের চাহিদা বিবেচনা করে নেয়া হয়েছিল।’
‘অর্থ ছাড় কিছু সমস্যা ছিল ও আমরা সেগুলো সমাধান করছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের অর্থায়নে ভবিষ্যতে কিছু প্রকল্প থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যা পেয়েছি, তাতে থেমে থাকব না এবং আমরা সেই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন ও এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলব।’
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদিও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে; যা ভারতের পক্ষে ঝুঁকছে। তবে, সমস্যাটি সমাধান করা হবে।’
তিনি জানান, ভারতীয় হাইকমিশনার তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তারা ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের আরো মানসম্পন্ন রপ্তানিকে উৎসাহিত করবে এবং এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হওয়া উচিত।’
ভারতীয় পক্ষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও গবেষণাগারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তার দেশ বাংলাদেশে কোন লাইন অব ক্রেডিট প্রকল্প বন্ধ করেনি। কারণ, এগুলো বড় প্রকল্প।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ প্রকল্পগুলো চলছে এবং এগুলো মূলত বহু বড় প্রকল্প এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। তাই, ঠিকাদাররা প্রকল্পগুলো শুরু করতে ফিরে আসবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে অন্য প্রশ্নের উত্তরে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা সরকারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ও উপদেষ্টার সঙ্গে আমার বৈঠক তার প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘূর্ণায়মান সমস্যাটি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা হবে ও ভারতীয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ইতিবাচক।’
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তিনি উপদেষ্টাকে কিছু ভারতের অর্থায়নের প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এগিয়ে যাওয়ার।’
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পক্ষ তার উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে তার লাইন অব ক্রেডিট প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরে খুব খুশি। কারণ, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তাদের জন্য এগুলো উপকারী প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করেছে।’
বাংলাদেশ ও ভারত ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের প্রথম লাইন অফ ক্রেডিট চুক্তি সই করে। দুই বিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট চুক্তিটি ২০১৬ সালের মার্চ মাসে সই হয়েছিল। একই পদ্ধতির আওতায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার জড়িত তৃতীয় চুক্তিটি মার্চ ২০১৭ সালের মার্চে সই হয়।