শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের পুষ্টিগুণ নিশ্চিতে স্মার্ট ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয়

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের জন্য খাবারের পুষ্টিমান সমৃদ্ধকরণ, স্বাস্থ্যের উন্নতি, দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিতে ও জনস্বাস্থ্যকে সুরক্ষা দিতে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় ফোর্টিফাইড ফুড উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের সহযোগিতায় ‘ডিজিটাইজেশন অফ ফরটিফিকেশন অফ এডিবল ওয়েল ফর ইমপ্রুভড মনিটরিং, কোয়ালিটি কনট্রোল অ্যান্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় ‘ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান নিশ্চিতকরণে ডিজিটাল মনিটরিং ও বোতলজাতকরণে সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন প্রকল্প পরিচালক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আনোয়ারুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাক্তার রুদাবা খন্দকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গেইন বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড, লার্জ স্কেল ফুড ফরটিফিকেশন ও ভ্যালু চেইন আশেক মাহফুজ।

কর্মশালায় জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য সব সময়ই একটি অগ্রগণ্য বিষয়।’

তাই, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণে ডিজিটাল স্মার্ট ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম অন্তর্ভূক্ত করার পদক্ষেপকে তিনি স্বাগত জানান।

এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘যে কোন নতুন কিছু প্রতিষ্ঠিত করতে ধাপে ধাপে কাজ করতে হয় ও এটি সময় সাপেক্ষ। সবাই সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’

দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিবেচনায় সবাইকে তিনি এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।

জাকিয়া সুলতানা আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে দ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

এই ধারাবাহিকতাকে অব্যহত রাখতে ও ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালনে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এএইচএম শফিকুজ্জামান ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্র্রতিষ্ঠান ও রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খোলা তেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করার ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়কে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। পাশাপাশি, তিনি ডিজিটাল সিস্টেম সম্পর্কে উল্লেখ করেন, যা ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের প্রোডাকশন ভ্যালুচেইনের ফর্টিফিকেশন সংক্রান্ত ডাটা ট্রেস করতে ও বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে।

রুদাবা খন্দকার ডিজিটালাইজেশনের এই উদ্যোগের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার আহ্বান জানান।

কর্মশালায় অন্য বক্তারা উল্লেখ করেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথযাত্রায় সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটা সত্যিই আশাব্যঞ্জক ও প্রশংসনীয় যে, বাংলাদেশের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প রয়েছে। খাবারে পুষ্টিমান সমৃদ্ধকরণ এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে খাদ্য লবণ ও ভোজ্যতেলের ফরটিফিকেশন বাধ্যতামূলক করাও সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন উন্নত মনিটরিং সিস্টেমসহ ডিজিটালাইজড ফর্টিফিকেশন ব্যবস্থাও সরকারের অন্যতম সাফল্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের ধারা অব্যহত রাখতে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনশক্তি অন্যতম নির্ণায়ক। তাই, জনস্বাস্থ্যকে সবার উপরে গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য লবণ ও ভোজ্যতেলের পুষ্টিমান সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করতে ডিজিটালাইজড ফর্টিফিকেশন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পের সহায়তায় বর্তমান প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিক ও সমন্বিতভাবে খাবরের গুণগত মান নিশ্চিতকরনের জন্য একটি ক্রস-সেক্টর ডেটা সিস্টেম তৈরির কাজ চলছে।

রিফাইনারী পর্যায়ে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, উন্নত পর্যবেক্ষণ ও ফুড ফর্টিফিকেশন ভ্যালুচেইন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট রিফাইনারী, রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি ডিজিটাল ফোর্টফিকেশন কোয়ালিটি ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম চালু করা। ২০২১ সালে প্রকল্পটির সূচনাকালে এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর রূপকল্পের সাথে সংযুক্ত ছিল এবং এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ২০৪১ রূপকল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের সহায়তায় শিল্প মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে; যাতে সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বজায় রাখার জন্যে সঠিক মাত্রায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের সাথে ভোজ্যতেল ফরটিফিকেশন নিশ্চিত হয়।ফোর্টিফিকেশনের মান ও ফোর্টিফাইড খাদ্য ভোক্তাদের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছায় কিনা তা পর্যাবেক্ষন করতে এই প্রকল্প কাস্টামাইজড ডিজিটাল সিস্টেম চালু করবে।

বাংলাদেশে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাবার লবণের ফোর্টিফিকাশন বাধ্যতামূলক ও প্রায় দশ বছর ধরে ভোজ্যতেলের ফোর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক। তবে, এই খাবারগুলোর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের নির্ধারিত মান পূরণ করে কীনা, তা নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। মার্কেট পর্যায়ে খাবার তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, খাদ্য অপর্যাপ্তভাবে ফোর্টিফাই করা বা কোন কোন ক্ষেত্রে ফোর্টিফাই করাই হয় নি। এর ফলে, বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মোকাবেলায় ফুড ফোর্টিফিকেশন আশানুরুপভাবে কার্যকর হতে পারছে না। যার মধ্যে ভিটামিন এ এবং আয়োডিনের ঘাটতিও রয়েছে। দেশের গুরুতর স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ২০১৯-২০ ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ এর যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে।

অপর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ এর কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না, শ্বাসযন্ত্র ও ডায়রিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি থামিয়ে দেয় ও গুরুতর অসুস্থতা থেকে বাঁচার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যেও ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব পাওয়া গেছে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা ও মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী। ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জরিপে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ও প্রজননক্ষম মহিলাদের মধ্যে আয়োডিনেরও ঘাটতি পাওয়া গেছে। আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগসহ থাইরয়েডের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। আয়োডিনের অভাব শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার একটি প্রধান প্রতিরোধযোগ্য কারণ।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি চরম ক্লান্তি সৃষ্টি করে, কার্যক্ষমতা হ্রাস করে ও হতাশা এবং সমাজের সাথে বিচ্ছিন্নতা বাড়ায়। দেশের ফোর্টিফাইড ফুড উৎপাদনকারীদের জন্য ডিজিটাল বিপ্লব ফোর্টিফিকেশন সমস্যা মোকাবেলায় নতুন সুযোগ তৈরি করেছে ও সেই সাথে তাদের ব্যবসায়ের দক্ষতা ও মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। পাইলট প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত তেল উৎপাদনকারীদেরকে ডিজিটাল বিশেষজ্ঞদের একটি দল কো-ডিজাইন ও নতুন ডিজিটাল মান নিশ্চিতকরণ/মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইনস্টল করতে সহায়তা করবে; যা উৎপাদনকারীদের সঠিক মান নিশ্চিতকরন এবং ইন্সাইট দেয়ার মাধ্যমে লাভজনকভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে সাহায্য করবে।