নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এক ভারতীয় শিক্ষার্থী ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তার পরিচয়ধারী প্রতারকদের হাতে পাঁচ হাজার হাজার মার্কিন ডলার হারিয়েছেন বলে নিউজউইক জানিয়েছে।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শ্রেয়া বেদি ২০২২ সালে এফ-১ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান। গত ২৯ মে তাকে ফোন করে প্রতারকরা জানান, তিনি নাকি অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেছেন। গ্রেপ্তার ও দেশ থেকে বহিষ্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে তাকে ‘বন্ড’ হিসেবে পাঁচ হাজার হাজার ডলারের গিফট কার্ড কিনতে হবে।
বেদি বলেন, ‘তিনি আমাকে নিজের নাম ও ব্যাজ নম্বর দেন এবং বলেন, যেন আমি আইসিইডটগভ ওয়েবসাইটে এ গিয়ে মেরিল্যান্ড অফিস সম্পর্কে তথ্য যাচাই করি। আমি দেখতে পাই, ফোন নম্বরটা মিলে গেছে।’
এরপর বেদি আরেকটি ফোন পান, যেখানে অপর পাশ থেকে নিজেকে অলিম্পিয়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলা হয়, তার ফোন ‘মনিটর’ করা হচ্ছে, তাই কলটি কেটে দিলে মামলা আরো খারাপ হবে। বেদি বলেন, ‘ওরা আমাকে টানা তিন ঘণ্টা ফোনে রেখেছিল, বারবার সতর্ক করছিল, যদি আমি ফোন কাটি বা কাউকে জানাই, তাহলে সেটা মামলার লঙ্ঘন হবে।
আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে কোনো ঝুঁকি নিতে পারিনি।’
প্রতারকদের কাছে বেদির সব ব্যক্তিগত তথ্য ছিল—তিনি ভারতের কোন শহর থেকে এসেছেন, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, এমনকি একাডেমিক রেকর্ডও। বেদি বলেন, ‘এত ব্যক্তিগত তথ্য ওদের কাছে ছিল, যা সাধারণত সরকারি সংস্থারাই জানে।’
প্রতারকরা তাকে অ্যাপল ও টার্গেট ব্র্যান্ডের পাঁচ হাজার ডলারের গিফট কার্ড কিনতে বলে এবং কার্ডের কোড পাঠাতে বলে। তারা এটাও জানায়, পরদিন একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার কাছ থেকে গিফট কার্ড ও বন্ডের কাগজ নিয়ে যাবেন। কিন্তু এরপর কেউ আর যোগাযোগ করেনি। ভুক্তভোগী বলেন, ‘তারা আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রেখেছে, বারবার বলেছে, আমি গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার হতে যাচ্ছি।’
বর্তমানে বেদি চরম আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। শিক্ষাঋণ পরিশোধ করতে করতে নতুন করে আরো পাঁচ হাজার ডলারের দেনায় পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে একা থাকি, পরিবারের কোনো সাহায্য নেই। এই অর্থটা আমার টিকে থাকা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য ছিল। এ ঘটনা আমার সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিল—সঞ্চয়, দেশে ফেরার সময়সূচি বা এইচ-১বি ভিসার আবেদন—সব কিছুতেই প্রভাব ফেলছে।’
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পক্ষে মার্কিনব্যবস্থা বোঝা কঠিন, যার ফলে তারা ‘সহজ টার্গেট’ হয়ে যায়। ‘আমি লজ্জিত যে এই ফাঁদে পা দিয়েছি, কিন্তু চাই, সবাই যেন আমার ভুল থেকে শিখে নেয়।’
বেদি এখন গোফান্ডমি প্ল্যাটফরম থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করছেন। তিনি বলেন, ‘আপনার সব সময় অধিকার আছে ফোন কেটে আইনজীবীকে কল করার। সরকার সাধারণত সরাসরি ফোন করে না, অফিশিয়াল চিঠি পাঠায়। কোনো বৈধ সরকারি সংস্থা কখনো গিফট কার্ড, ব্যাংক তথ্য বা সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর চায় না ফোনে। কেউ এসব চাইলে নিশ্চিত থাকুন সেটা প্রতারণা।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইসিই পরিচয়ধারী প্রতারকদের কার্যক্রম বেড়ে গেছে, বিশেষ করে যখন অভিবাসীদের গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। এনবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জুন এক দিনেই আইসিই দুই হাজার ২০০ জনকে আটক করে, যা এক দিনে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তারের রেকর্ড। সূত্র : এনডিটিভি