রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

শিরোনাম

মধুমতি সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসী পাচ্ছে পদ্মা সেতুর সুফল

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২২

প্রিন্ট করুন

টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ: দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলার মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছেন। সোমবার (১০ অক্টোবর) শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করেন। ওই দিন রাত ১২টার পর থেকে মধুমতি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করে। এ সেতু দিয়ে বোনাপোল বন্দর, নওয়াপাড়া নদী বন্দর, যশোর, নড়াইল, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলার সাথে ঢাকার যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ করে দিয়েছে। ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের দূরত্ব ১০০-২০০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে মধুমতি সেতু। এ অঞ্চলের মানুষ এখন দিনে দিনে ঢাকার কাজ সেরেই বাড়ি ফিরতে পারছেন। এ সুফল পেয়ে খুশী এ অঞ্চলের মানুষ।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামের গৃহবধূ মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘গত ২৫ জুন পদ্মা নেতু চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা এ সেতুর সুফল পাচ্ছিলাম না। আমাদের ফরিদপুর হয়ে দৌলৎদিয়া দিয়ে ঢাকা যাতায়াত করতে হত। এখন মধুমতি সেতু চালু হয়েছে। এ সেতু পার হয়ে আমরা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যেতে পারছি। এতে আমাদের ১০৯ কিলোমিটার পথ কমেছে। ঢাকা যাতায়াতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। দিনে দিনে কাজ সেরে বাড়ি পৌছাতে পারছি।’

যশোরে গদখালী এলাকার ফুল চাষী মোতালেব মোল্লা বলেন, ‘আমরা সারা বছর ফুলের চাষ করি। ফুলের সবচেয়ে বড় মার্কেট ঢাকা। আগে দৌলৎদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে ঢাকায় ফুল পাঠাতাম। তখন খরচ বেশি হত। এখন মধুমতি সেতু চালু হয়েছে। ঢাকার সাথে আমাদের দূরত্ব কমেছে প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এখন পদ্মা সেতু হয়ে দ্রুত ঢাকার বাজারে ফুল পাঠাতে পারছি। এতে পরিবহন খরচ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে।’

সেতু দ্রুত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলার অর্থনীতির চাকা গতিশীল করে তুলবে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী অংশে নতুন নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা, হোটেল রেস্তেরা গড়ে উঠেছে। এছাড়া এ অঞ্চলে আরো নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। মধুমতি নদীর চরে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সমাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি নদীর গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা সীমান্তের কালনা পয়েন্টে এই সেতু নির্মিত হয়েছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

মধুমতি সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুইটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক দশ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক চার দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।