ঢাকা: মারা গেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। রোববার (২৩ এপ্রিল) রাতে ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) থেকে তিনি হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার (২২ এপ্রিল) সকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। রোববার (২৩ এপ্রিল) দিবারাত ১২টা ২৫ মিনিটে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের চিকিৎসক লেলিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঐক্য ন্যাপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার পোস্তগোলা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। তার স্ত্রী মহিলা নেত্রী রাখী দাস পুরকায়স্থ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে মারা যান।
এ দিকে, ঐক্য ন্যাপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী শাসনের পতনের প্রাক্কালে, তিনি দেশের রাজনৈতিক গতিপথের রূপরেখা দিয়ে তিন-রাজনৈতিক জোটের রূপরেখা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্ম নেন। তার শিক্ষা জীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ওই সময় ছাত্র রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার ভূমিকার পাশাপাশি তিনি একজন ভাল ফুটবলার ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবেও প্রশংসিত হন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও এসব আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সাথে প্রায় একই সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি সেলে তাকে রাখা হয়েছিল। পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। তিনি ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সারা জীবন তিনি বাম রাজনীতির আদর্শ ধারন করেছেন। ১৯৯৩ সালে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। পরবর্তী তিনি দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক জনগণের জন্য ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি।