মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সই জালকারী বিএনপি একটা জালিয়াত দল

শনিবার, মে ১৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কংগ্রেসম্যানদের সই জালকারী, জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা হাজিরকারী বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল।’

শনিবার (১৮ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটির কাজীর দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সভায় হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, বিএনপি গেল ২৮ অক্টোবর জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকে হাজির করেছিল। সে বিএনপি কার্যালয়ে শুধু ইংরেজি বলছিল, পুলিশ যখন ধরে নিয়ে গেল তখন দেখি গড়গড়িয়ে বাংলা বলে।’

তার পূর্বে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, তারা সে সময় বলেছিল, ভারতের অমিত শাহ ফোন করেছিল। কিন্তু, অমিত শাহের অফিস থেকে বলা হল, তিনি কাউকে ফোন করেননি, যে আওয়াজ প্রচার করা হয়েছিল, সেটা অমিত শাহের নয়। এসব জালিয়াতিই তাদের কাজ।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে বিএনপি ও তাদের দোসরদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দেখি জিএম কাদেরেরও মাথা খারাপ হয়ে যায়। নির্বাচনের পূর্বে আমরা দেখেছি, বিএনপি প্রতিদিন বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে ঘুরে বেড়াত আর দেন দরবার করত, নির্বাচনটা যাতে বন্ধ করা যায়। এসবে কোন লাভ হয় নাই। নির্বাচন হয়েছে, ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। যদি নির্বাচনের দিন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডা না থাকত, তাহলে আরো বেশি মানুষ ভোট দিত।’

তিনি বলেন, ‘আর বিএনপি যদি নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মানুষের উপর হামলা, ট্রেনে শিশুসন্তানসহ পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে খুন না করত, তাহলে ভোটের হার ৬০ শতাংশের বেশি হত।’

অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গেল দুই তিন বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বহু দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বহু দেশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। যদিও, সেখানে নির্বাচনে বর্জন ও প্রতিহতের কোন হুমকি ছিল না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে অত্যন্ত চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন যদি চমৎকার না হত তাহলে বিশ্বের ৮০টা দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পত্র লিখে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। সর্বশেষ দুই দিন পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে বিএনপির মাথা খারাপ। সম্ভবত সেই জন্য বিএনপি নেতা মঈন খান ইদানিং জ্যোতিষীর মত কথা বলছেন। বয়সে সিনিয়র বিএনপির নেতা মঈন খানের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, তিনি রাজনীতির বাইরে এখন জ্যোতিষীর দায়িত্বও পালন করা শুরু করেছেন।’

ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পরিচালনা করছিলেন, তখন মঈন খানের পিতা আবদুল মোমেন খান খাদ্য সচিব ছিলেন। খাদ্যবাহী জাহাজ ভারত মহাসাগর থেকে ফেরত যাওয়ার পেছনে তার পিতার কারসাজি ছিল, যাতে দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হয়।’

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘খাদ্য সংকট তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে আবদুল মোমেন খানের ভুমিকা ছিল। সেটির পুরস্কার স্বরূপ জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার পর আবদুল মোমেন খানকে মন্ত্রীর মর্যাদায় খাদ্য উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন। ৭৯ সালের নির্বাচনের পর আবদুল মোমেন খান সংসদে খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে বক্তৃতা বলেছিল, খাদ্যের জন্য দরকার হলে দেশ বিক্রি করে দেব। ওনারই সন্তান মঈন খান।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হলে, শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই, এ দেশে আর কোন বিকল্প নেই। তিনি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের ও সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে। ২০১৮ সালে আমাদের স্লোগান ছিল- আমার গ্রাম আমার শহর। আজকে গ্রামগুলো শহরের মত হয়ে গেছে, গ্রাম আর শহরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘এবার আমরা স্লোগান দিয়েছি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নেন্স ও স্মার্ট পিপল। এ চারটি অনুসঙ্গকে আমরা সঙ্গে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ রচনা করতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এ অভিযাত্রায়ও জয়ী হব। কিন্তু, আমাদের অভিযাত্রাকে আটকে দিতে চায় বিএনপি ও তাদের দোসররা। সেই কারণেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিন। সভায় বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও শফিক আদনান।

হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম সিটির কদম মোবারক এতিমখানায় যান। সেখানে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ কমিটির উদ্যোগে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তিনি সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে সুষম খাবার বিতরণ করেন। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন।