সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

শিরোনাম

মুমিনের রমজান প্রস্তুতি: করণীয় ও পরিকল্পনা

শনিবার, মার্চ ১, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ইসলাম ডেস্ক: পবিত্র রমজানের আগমনের অপেক্ষায় এক অনন্য অনুভূতিতে দিন কাটাচ্ছে মুমিনের হৃদয়। ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, প্রস্তুতির ধ্বনি বেজে উঠছে জীবনের প্রতিটি প্রান্তে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন এবং নিজেও এই বরকতময় মাসে অধিক ইবাদতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। একজন মুমিনের রমজান কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা: রমজানের আগে থেকেই একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করা জরুরি। প্রয়োজনীয় কাজগুলো গুছিয়ে ফেলা, কায়িক পরিশ্রমের কাজ শেষ করা এবং ইবাদতের সময় বের করা উচিত। ইফতার, সাহরি ও আমল পরিকল্পনার পাশাপাশি কোরআন ও ইসলামিক বই সংগ্রহ করা যেতে পারে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করে, অথচ এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি, তার জন্যও সওয়াব লেখা হয়। আর যদি তা সম্পন্ন করে, তাহলে তাকে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৫)

দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ: এই রমজান যেন অতীতের যেকোনো রমজানের চেয়ে বেশি বরকতময় হয়, সে লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নামাজ, রোজা, দান-সদকা, ইসতেগফার ও কোরআন তেলাওয়াতের পরিকল্পনা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)

বেশি বেশি দোয়া করা: আল্লাহ তার বান্দার দোয়া শুনেন ও কবুল করেন। রমজানের আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত- ‘হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন, আমার জীবন রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন, এবং বরকতময় করে দিন।’ আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দারা যখন আমার ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, বলুন, আমি কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখনই কেউ আমাকে ডাকে।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

রমজানের শিক্ষা ও বিধান জানা: রমজানের ফজিলত সম্পর্কে জানা এবং আমল ও মাসায়েল শেখা গুরুত্বপূর্ণ। কোন কাজ করা উচিত এবং কোনটি বর্জনীয়, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। বিশ্বস্ত আলেমদের থেকে মাসায়েল জেনে আমল করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)

নামাজে মনোযোগী হওয়া: অনেকেই ভাবেন, রমজানে এসে নামাজ শুরু করবেন, যা শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া কিছু নয়। এখন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনম্রতা অবলম্বন করে এবং অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে।” (সুরা মুমিন, আয়াত: ১-৩)

গুনাহ ও খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ: রমজানের বরকত লাভের জন্য এখন থেকেই গুনাহ ও খারাপ অভ্যাস বর্জন করা প্রয়োজন। পাপাচার ও অপবিত্রতা নিয়ে রমজানে প্রবেশ করলে এর পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো। যারা গুনাহ করে, তারা শিগগিরই তার প্রতিফল পাবে। (সুরা আনআম, আয়াত: ১২০)

কোরআন তেলাওয়াত করা: রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকেই কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যারা নিয়মিত পড়েন না, তারা শিখে নেওয়ার চেষ্টা করুন। যারা পড়েন, তারা বেশি বেশি খতম দেওয়ার পরিকল্পনা করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে, তার দৃষ্টান্ত সুগন্ধিযুক্ত লেবুর মতো। আর যে ব্যক্তি পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত সুগন্ধহীন খেজুরের মতো। (বুখারি, হাদিস: ৫০২০)

আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান: রমজান সম্পর্কে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সচেতন করা উচিত। রমজানের ফজিলত ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সম্ভব হলে মসজিদে ইসলামী আলোচনা বা সেমিনারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেন, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর পথে আহ্বান জানায় এবং সৎকাজ করে? (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত: ৩১)

দান-সদকা করা: রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা, ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা করা এবং অভাবীদের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, দান করো, আমিও তোমাদের জন্য ব্যয় করব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯৮)

রমজানকে স্বাগত জানাতে এই প্রস্তুতিগুলো নেওয়া গেলে, মুমিনের জন্য এটি হবে এক অনন্য, বরকতময় ও আত্মশুদ্ধির মাস। আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন।