শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মৃত্যুগর্ভে আটকে পড়া খনি শ্রমিকের মর্মস্পর্শী চিঠি ১২২ বছর পর ভাইরাল

রবিবার, আগস্ট ১৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

টেনেসি, যুক্তরাষ্ট্র: মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু, কেউ যখন জানতে পারেন, মৃত্যু ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। অথচ কিছু করার নেই। তখন কেমন হয় তার মনের অবস্থা? যুক্তরাষ্ট্রে আজ থেকে ১২২ বছর পূর্বে এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন দুই শতাধিক খনি শ্রমিক। বুঝতে পারছিলেন, বাঁচার কোন আশা নেই। সেই অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন এক খনি শ্রমিক। যার ছত্রে ছত্রে ছিল স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালবাসা আর বাঁচার আকুতি। এত দিন পর সেই চিঠি খুঁজে পাওয়া গেছে; যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯০২ সালের ১৯ মে। টেনেসি শহরে একটি কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় খনিমুখ। বিস্ফোরণের জেরে তৎক্ষণাৎ ১৯০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ভিতরে আটকে পড়েন ২৬ জন।

নিজেদের বাঁচাতে তারা খনির আরো ভিতরে চলে যান। কিন্তু, ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাদের। বুঝতে পারেন, বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তখন জ্যাকব ভাওয়েল নামে এক শ্রমিক তার স্ত্রীকে পত্র লিখেন।

স্ত্রী ও সন্তানদের বিদায় জানিয়ে লেখা মর্মস্পর্শী এ চিঠিতে সন্তানদের যতটা সম্ভব ভাল রাখতে স্ত্রীকে অনুরোধ করেন। স্ত্রী এলেনের উদ্দেশে জ্যাকব লেখেন, ‘খারাপ পরিস্থিতিতে তোমায় রেখে যেতে হচ্ছে আমায়। আমার সন্তানদের মানুষ করার জন্য ঈশ্বরের ওপর আস্থা রেখ। এলেন, আমার ছোট্ট লিলির খেয়াল রেখো। ঈশ্বরের উপর আস্থা রয়েছে ছোট্ট এলবার্টের।’

এরপর লেখেন, ‘আমরা আহত হইনি। এখানে আমরা মাত্র কয়েকজন আছি। বাকিরা কোথায় রয়েছে জানি না। এলবার্ট তোমায় বলছে, স্বর্গে দেখা হবে। আমার সব সন্তানকে বল, আমাদের দুইজনের সাথে স্বর্গে ফের দেখা হবে।’

এ চিঠি থেকে স্পষ্ট জ্যাকব ও এলবার্ট খনির ভেতর আটকে পড়েছিলেন। খনির ভেতরের অবস্থা বর্ণনা করে জ্যাকব জানান, তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। একটু বাতাসের জন্য প্রার্থনা করছেন।

স্ত্রীকে জ্যাকব লেখেন, ‘মনে হচ্ছে, তোমার সাথে যদি থাকতে পারতাম। আমরা আর কয়েকজন বেঁচে রয়েছি। হে ঈশ্বর, যেন আর এক বার শ্বাস নিতে পারি।’

শেষে স্ত্রীকে জ্যাকব লিখেছেন, ‘যত দিন বেঁচে থাকবে, আমাকে মনে রেখ। বিদায়।’

কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত খনির মধ্যে জ্যাকবসহ ওই ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সবমিলিয়ে ওই খনিতে মৃত্যু হয় ২১৬ জনের। বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে ওই দুর্ঘটনার পর খনি শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে।