নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে বার্ড ফ্লু। হাস-মুরগী ছাড়াও রাজহাস, বাজপাখি ও চিলের বার্ড ফ্লুর এইচ৫এন১ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিউ ইয়র্কজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শহরের অধিবাসীদের পশুপাখিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। খবর ডেইলি মেইলের।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে বিভিন্ন পার্ক ও বনাঞ্চলে রাজহাস, বাজপাখি ও চিলের মধ্যে বার্ড ফ্লুর এইচ৫এন১ ভাইরাস পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সেই সাথে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অধিবাসীদের ও দর্শনার্থীদের কোন পাখি তাড়ানো বা ধরার চেষ্টা না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি এসব পাখির বিষ্ঠার সম্পর্শে আসার পর দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে টেক্সাসের একজন কৃষকের দেহের এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার দ্বিতীয় কোন ঘটনা এটা।
এরপর এটি অন্য মানুষে সংক্রামিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার প্রতিটি ঘটনায় ভাইরাসের মিউটেশন বা রুপান্তরের ঝুঁকি বাড়ায়। যার ফলে এটি আরো ভালভাবে সংক্রমিত হতে পারে ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মহামারি থেকেও ১০০ গুণ ভয়ংকর রূপ নিতে পারে বার্ড ফ্লু। যা উচ্চ মৃত্যুহারের কারণও হতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, ‘এরমধ্যেই এ ভাইরাসটি সংক্রমণের শিখরে পৌঁছে গেছে।’ যে কোন সময়েই তা মহামারির রূপ নিতে পারে বলে সতর্কও করেছেন তারা।
২০২০ সালের শুরুর দিকে পৃথিবীব্যাপী করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। কোটি কোটি মানুষ এতে সংক্রমিত হন। প্রাণও হারান কয়েক কোটি মানুষ। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খায় পুরো পৃথিবী। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের ভয়ংকর এ সংক্রমণের সতর্কতা দিলেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ভয়ংকর রূপ নিতে চলেছে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ। এটি কার্যত মহামারির রূপ নিচ্ছে। যদি এ সংক্রমণ মহামারির রূপ নেয় তবে তা করোনা সংক্রমণের থেকেও ১০০ গুণ বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
ফলে, যে বা যারা সংক্রমিত হবে তাদের অর্ধেকেরই প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। পিটসবার্গের একজন বিশিষ্ট বার্ড ফ্লু গবেষক সুরেশ কুচিপুদি বলেছেন, ‘এইচ৫এন১ ফ্লু মানুষসহ বিস্তৃত স্তন্যপায়ী প্রাণীকে সংক্রমিত করার ক্ষমতার কারণে মহামারি সৃষ্টি করতে পারে। আমরা বিপজ্জনকভাবে এ ভাইরাসের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এটির বিরুদ্ধে মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার সময় এসেছে।’
অন্য এক গবেষক জানান, বার্ড ফ্লুয়ের এ স্ট্রেইন যদি আরো অভিযোজন বা মিউটেশন হয় এবং অতি সংক্রামক ধারাই বজায় রাখে তবে মৃত্যুহারও বাড়তে থাকবে। কিছু গবেষক সতর্ক করেছেন, এইচ৫এন১ ভাইরাস শ্বাসনালিকে সংক্রমিত করতে পারে। এমনকি চোখের মত অন্যন্যা সংবেদনশীল অংশগুলোও সহজে সংক্রমিত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০০৩ সাল থেকে যতজন এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তাতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮৮৭ জনের দেহে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ৪৬২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সেই তুলনায় বর্তমানে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার শুন্য দশমিক এক শতাংশেরও কম, যা সংক্রমণের শুরুতে ২০ শতাংশের বেশি ছিল।