ঢাকা: ‘যাই হোক না কেন’ অন্তবর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একইসাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আগামী দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াকার-উজ-জামান এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী এ সরকার দেশের প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের এ সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়া সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়ার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন তিনি।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি তার (মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’
বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রতি সপ্তাহেই বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল। আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোন কারণ নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীর ভেতরে অন্যায়ের সাথে জড়ানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘েএরমধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে আর কোন বিস্তারিত তথ্য দেননি সেনাপ্রধান।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা বিচ্যুতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকতে পারেন।’
দীর্ঘ মেয়াদে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখার ইচ্ছার কথাও জানান সেনাপ্রধান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকবে। সেক্ষাত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলান। অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এ দিকটায় নজর দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ওয়াকার-উজ-জামান।
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। কোন অবস্থাতেই একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।’