ঢাকা: পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর টনক নড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অবশেষে সমবেদনা জানিয়েছে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। অথচ এর আগে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দেশটি। এবারই প্রথম এমন শোক জানিয়েছে দেশটির দূতাবাস।
বুধবার (১৯ জুলাই) ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলমের ওপর হামলার পর মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৩ দূতাবাস ও হাইকমিশন। এর প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যখন-তখন লোক মেরে ফেলে। তারা কি কখনো বিবৃতি দেয়? ইউএন কি কোন দিন বিবৃতি দিয়েছে? বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে লোক মরে যায় কেন?’
‘ক্যামব্রিজে একটি বাঙালি ছেলে মারা গেল ফয়সাল, তারা কি বলেছে যে, ছেলের তদন্ত কত দূর হয়েছে। কিংবা রাষ্ট্রদূতরা কি দল বেঁধে কোন বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ হলেই হইছে, একটা মগের মুল্লুক পাইছে ওরা।’ যোগ করেন তিনি।
এ দিকে, আশরাফুল আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি (আরসি) গোয়েন লুইস টুইট করেছিলেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী শেলডন ইয়েটকে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্বজুড়ে ‘মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা’ যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলা নৈমিত্তিক ঘটনা। দেশটিতে বাংলাদেশিদের এমন মৃত্যুর খবরও আসছে প্রায়ই। এ বছরই দুইজন বাংলাদেশি বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের নাম আরিফ সাঈদ ফয়সাল (২০)। যিনি ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অব আমহার্স্টের ছাত্র ছিলেন। আরেকজন ইয়াজ উদ্দিন রমিম (২২)। এর আগে ২০২১ সালে মোয়াজ্জেম হোসেন সাজু (২৮) নামে একজন নিহত হন। এসব ঘটনার পর শুক্রবার (২০ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রমিমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে সমবেদনা জানিয়ে পোস্ট দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘মিসৌরিতে ডাকাতির ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি ছাত্রের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এ ধরনের ঘৃণিত অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ।’
বলে রাখা ভাল, যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরে কর্মস্থল বিপি গ্যাস স্টেশনে গেল মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালের দিকে ইয়াজ উদ্দিন রমিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত ইয়াজ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ভালুকিয়া এলাকার বাদশাহ মিয়া সওদাগর বাড়ির মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় ছেলে। সেন্ট লুইস শহরের পার্কওয়ে সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে স্নাতক শেষ করে রমিম কমিউনিটি কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করছিলেন। পাশাপাশি, বিপি গ্যাস স্টেশনে কাজ করতেন।