শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আঘাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রাশিয়ার

শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

মস্কো, রাশিয়া: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও আঘাত হানতে সক্ষম ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক আন্তমহাদেশীয় দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মোতায়েন করেছে রাশিয়া। চলতি সপ্তাহে রাজধানী মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে কালুগা অঞ্চলের কোজেলস্কি মিলিটারি কম্পাউন্ডে আরএস-২৪ ইয়ার্স নামে এ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। এ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ‘লিটল বয়’ পরমাণু বোমার চেয়ে ১২ গুণ বেশি শক্তিশালী।

ইউক্রেনকে শিগগিরই অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়া হবে- বাইডেন প্রশাসনের এমন পরিকল্পনার খবর গণ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই এ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করল রাশিয়া। পাশাপাশি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে পাঠানো হলেই মস্কো তাতে হামলা চালাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণারয় একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ফুটেজে আরএস-২৪ ইয়ার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের বিষয়টি দেখানো হয়েছে।

ফুটেজে দেখা যায়, একটি দীর্ঘ বিশেষায়িত যানে করে ক্ষেপণাস্ত্রটি মস্কো থেকে প্রায় ২০০ কিলেমিটার দূরে কোজেলস্কি মিলিটারি কম্পাউন্ডে নেয়া হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যানের পেছনে অবস্থান করছে বেশ কয়েকটি মিলিটারি ট্রাক। কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশের পর যানটি সেখানে অবস্থিত মিসাইল সাইলো তথা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার সামনে অবস্থান নিচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে লোডিং ইউনিটের সাহায্যে মিসাইলটিকে সাইলোতে বসানো হচ্ছে।

রুশ দৈনিক কসমোল্লায়া প্রাভদার খবরে বলা হয়েছে, ‘আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আরএস-২৪ ইয়ার্সের রেঞ্জ বা পাল্লা প্রায় সাত হাজার ৫০০ মাইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন বাহিনী ‘লিটল বয়’ নামের যে ধ্বংসাত্মক পরমাণু বোমা ফেলেছিল, আরএস-২৪ ইয়ার্সের ক্ষমতা তার ১২ গুণ।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাশিয়ার ‘স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল ফোর্সেস ডে’। দিবসটিকে সামনে রেখে দেশটি তাদের কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের বিভিন্ন সংগ্রহ প্রদর্শন করছে। আরএস-২৪ ইয়ার্স ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ভিডিওটি সে প্রচারণার অংশ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, পশ্চিমা দেশগুলোকে পরমাণু অস্ত্রের ভয় দেখানোর জন্য ভ্লাদিমির পুতিনযুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশে আঘাত হানতে সক্ষম আরএস-২৪ ইয়ার্স ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলেন।

রাশিয়ার মিসাইল ফোর্স তথা ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়ক কমান্ডার কর্নেল আলেক্সি সোকোলভ বলেছেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দুইটাই আরএস-২৪ ইয়ার্সের রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তাই পশ্চিমাদের বার্তা দিতেই এর মহড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ইয়ার্স ক্ষেপণাস্ত্র যথাসময়ে যুদ্ধের ময়দানে নামানো সম্ভব হয়েছে।’

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয় সংঘাত। দম মাস ধরে সেই সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ না নিলেও কিয়েভকে সামরিক ও বেসামরিক সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ও দুইজন মার্কিন কর্মকর্তা বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে; যা এ সপ্তাহের শুরুতেই ঘোষণা করা হবে।

এ দিকে, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে এলে তা রাশিয়ার বৈধ লক্ষ্যবস্তু হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ক্রেমলিন। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দেয়ার বিষয়ে ন্যাটোকে সতর্ক করেছেন। এ ব্যবস্থা ইউক্রেনে পাঠানো হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

এ ছাড়া ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘অবশ্যই’ রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে। তবে অসমর্থিত মিডিয়া রিপোর্টের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

এ দিকে, ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, ‘প্রস্তাবিত এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থানান্তর উসকানিমূলক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে।