ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিক ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি নাগরিকও ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র না থাকা ৪০০-৫০০ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানোর জন্য এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় দুইটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত
বুধ ও বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে এবং প্রতি সপ্তাহে ছয়-সাত জন বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। ফেরত আসা সব বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকার বিমানবন্দরে গ্রহণ করার পর সরকার তাদের বাড়িতে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈঠকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় এবং যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের যেন হাতকড়া না পরানো হয়, সে বিষয়ে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প প্রশাসন ২০ জানুয়ারি অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে। সে অনুযায়ী মুসলিম এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশসহ ১০ দেশের সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করে আবারও ‘ট্র্যাভেল ব্যান’ আদেশ জারির চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মধ্য মার্চের পর এ আদেশটি জারি হতে পারে। এ আদেশের আওয়তায় থাকা দেশগুলো হচ্ছে কিউবা, ইরান, লিবিয়া, নর্থ কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।
হোয়াইট হাউসের উদ্ধৃতি দিয়ে শুক্রবার (৭ মার্চ) নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, তালিকাটি আরও দীর্ঘ হতে পারে। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ এ তালিকার আওতায় আসতে পারে।
হোয়াইট হাউসের সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ট্র্যাভেল ব্যানের আওতাভুক্ত দেশের বাইরেও বেশ কয়েক ডজন রাষ্ট্রকে ‘অরেঞ্জ’ এবং ‘ইয়েলো’ ক্যাটাগরিতে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ এসব দেশের নাগরিকও বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী ভিসা পাবেন না। তাদের ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হবে ওয়াশিংটন ডিসি কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত।
জানা গেছে, ট্র্যাভেল ব্যানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের তালিকা নির্বাহী দপ্তরের মতামত চেয়ে বিতরণ করেছে হোয়াইট হাউস। এটি হচ্ছে ‘রেড লিস্ট’ এবং চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এসব দেশের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবেন না। অন্যদিকে ‘অরেঞ্জ’ গ্রুপের দেশসমূহের নাগরিকের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হবে না। কেবল ব্যবসায়ীরা ভিসা পাবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। তবে বেশি দিন থাকতে পারবেন না। এ গ্রুপের দেশসমূহের নাগরিক ইমিগ্র্যান্ট কিংবা ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য অযোগ্য হবেন।
ভিসার জন্য এসব দেশের নাগরিকদের দূতাবাসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ইন্টারভিউ দিতে হবে। তৃতীয় গ্রুপটি হচ্ছে ‘ইয়েলো’। এ গ্রুপকে ৬০ দিন সময় দেওয়া হতে পারে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো সম্পন্নের জন্য। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়া যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য ফ্লাইট ছাড়ার আগেই ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। পাসপোর্ট ইস্যুতে যথাযথভাবে সতর্কতা অবলম্বন, যাতে ভিনদেশি সন্ত্রাসীরা পাসপোর্ট না পায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ দেশের নাগরিক যাতে ইয়েলো ক্যাটাগরির দেশের পাসপোর্ট বানাতে না পারে।