মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের প্রায় ১০-১৫ একর জমি জবরদখল করে রেখেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। এর ফলে বাগানের ওই অংশে রাবার গাছ থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে রাবার বিভাগের প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোন কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও পরিদর্শন সাপেক্ষে রাবার বিভাগের ওই জায়গা থেকে চুয়েটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নিদের্শনা দিয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত চুয়েটের দখল থেকে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর আগে এ বিষয়ে চুয়েটের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করেছিল রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে রাবাবর বিভাগের কর্মকর্তারা বেকায়দায় রয়েছেন।
রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে যে, ‘আইটি পার্ক স্থাপনের জন্য চুয়েট কর্তৃপক্ষকে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগানের ৬৯ পাড়া মৌজায় দশ একর জায়গা বন্দোবস্তী দিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ পরিপ্রেক্ষীতে ৯১০২ ও ৯১৪২ দাগে দশ একর জায়গা চুয়েটের নামে নাম জারী করা হয়। তবে, দশ একরের বদলে চুয়েট প্রায় ২০-২৫ একর জমি দখল করে আছে ও রাবার গাছ থেকে উৎপান বন্ধ রেখেছে। এতে প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। ওই ভূমিতে ২০১২-১৩ সালে নতুন ৫৯ একর রাবার বাগান সৃজন করা হয়। সেখানে, বর্তমানে ১১ হাজার ১০০টি রাবার গাছ রয়েছে। তাই, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য বন্দোবস্তীকৃত দশ একর ভূমির বন্দোবস্তী বাতিল করে সরকারী খালি জায়গায় আইটি পার্ক স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া যায়। যদি বরাদ্দ বহাল রাখা হয়, সেক্ষেত্রে ওই এলাকার গাছ বাবদ ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।’
রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষীতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গেল ২১ মে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (রাবার বিভাগ) জায়গায় অবৈধ স্থাপনাগুলো এসি ল্যান্ডের পরিদর্শন সাপেক্ষে উচ্ছেদ করা হবে।’ তবে, এখনো পর্যন্ত রাবার বিভাগের জায়গা থেকে চুয়েটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
রাবার বিভাগ চট্টগ্রাম জোন কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘২০১৫ সালে চুয়েটকে দশ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বর্তমানে রাউজান-রাঙ্গুনিয়ায় রাবার বাগানের গাছগুলো চুয়েট কর্তৃপক্ষ দখল করে রেখেছে। আমরা মামলা করেছি। মামলা চলছে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না।’
রাউজান-রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগানের ব্যাবস্থাপক রাজীব রতন রাই বলেন, ‘বিষয়টা আদালতে বিচারাধীন আছে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম সিএম আদালতে একটা ও ঢাকায় উচ্চ আদালতে একটা মামলা করেছি আমরা। চট্টগ্রাম সিএম আদালতের মামলাটা রাউজান উপজেলা আদালতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এখানে আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে। আদালতে বিষয়টা দেখছেন।’
রাবার বাগান থেকে চুয়েটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্ত আমাদের মানতে হবে। আবার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি বিষয়টা রাউজান উপজেলার এসি ল্যান্ডকে জানিয়েছিলাম। এসি ল্যান্ড বলেছেন, ‘‘ইমারজেন্সি কিছু হলে উনাকে জানাতে’’।’
তবে, এসব ব্যাপারে এখনো কিছুই জানেন না চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জামশেদুল আলম ও মো. রিদুয়ানুল ইসলাম। তারা বলেছেন, ‘‘তাদের কাছে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা বা পত্র আসেনি।’’
রাবার বাগানে বরাদ্দ পাওয়া দশ একর জায়গার বদলে ২০/২৫ একর জায়গা দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ রফিকুল আলম কোন কথা বলতে রাজি হন নি। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না!