মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

রোজার প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির ঘাটতি

বুধবার, মার্চ ১৩, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: খাবার পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটির বিভিন্ন এলাকায়। রমজান মাসের শুরুতেই পানি সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছে নগরবাসী। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় সিটিতে এ সংকট দেখা দিয়েছে। সিটির বহু এলাকায় পুরো দিনই পানি মিলছে না। উঁচু এলাকায় পানির সংকট আরো বেশি দেখা দিয়েছে। সিটির চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, আগ্রাবাদ, দেওয়ান বাজার ও মুরাদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা গেল কয়েক দিন ধরে ওয়াসার পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। অনেকের অভিযোগ, মাঝরাতে সেহরির সময়ও তারা পানি পাননি। এত রাতে দোকানপাটও বন্ধ ছিল। এতে প্রথম সেহরিতেই তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

বহদ্দার হাটের মর্জিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সোমবার (১১ মার্চ) রাত থেকে বাড়িতে পানি নেই। সেহরিতে বোতলজাত পানি কিনে খেয়েছি। কিন্তু, ওজু-গোসল কীভাবে করব বুঝতে পারছি না। প্রতি বছর শুনি ওয়াসার নতুন নতুন প্রকল্প হয়, কিন্তু গ্রীষ্মকাল এলেই তাদের সব জারিজুরি শেষ হয়ে যায়। রমজানে পানির সংকটের ব্যাপারটি আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল। অথচ মাসে মাসে ঠিকই ওয়াসাকে পানির বিল নিচ্ছে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্তৃপক্ষ জানান, উৎসগুলো থেকে লবণ পানি উঠে আসায় ওয়াসার পানি পরিশোধন কমে গেছে। তাতে নগরজুড়ে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আবার রোজায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গেল ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রতি লিটার পানিতে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। মূলত কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়া এবং হালদার বিভিন্ন শাখা খালে বাঁধ দেয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘আমরা এখন রেশনিং করে পানি সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এলাকা ভাগ করে এক দিন পরপর পানি সরবরাহ দেয়া হবে। পানির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৪৫টি গভীর নলকূপ আবার চালু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বোচ্চ পানি থাকে ১০৯ ফুট। কিন্তু, বর্তমানে পানির স্তর কমে ৮৩ ফুটে নেমে এসেছে। লেকে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না ছাড়ার কারণে হালদায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী। পানির উচ্চতা নিচে নেমে যাওয়ায় ভাটার সময় নদী থেকে পানি নেওয়া যাচ্ছে না। আবার জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য ওয়াসার থেকে বিকল্প কোন সোর্স নেই। এখন দৈনিক প্রায় পাঁছ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে গেছে। সিটিতে রেশনিং করে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওয়াসা মদুনাঘাটে শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য হালদা নদী থেকে এবং রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত কর্ণফুলী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ এর জন্য কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে। কিন্তু, এখন দুইটি নদীতে পানির উচ্চতা কমে গেছে। কাপ্তাই লেকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় পানি ছাড়া হচ্ছে না। এতে জোয়ারের সময় হালদার অনেক ভেতরে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে।

নদীর পানিতে লবণাক্ততা ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লবণাক্ততার মাত্রাটা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। লবণাক্ততা দূরীকরণে শোধনাগারের জন্য নদীর যেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয় সেখানে ‘রিভার্জ অসনোসিস সিস্টেম’ বসানো যেতে পারে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা পানিতে লবণের মাত্রা থাকবে না।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ থেকে দৈনিক নয় কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক নয় কোটি লিটার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক নয় কোটি লিটার ও গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক চার কোটি লিটার নিয়ে দৈনিক মোট ৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। সিটিতে বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ৫৫ কোটি লিটার। কিন্তু, লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন আরো কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ সাত হাজার ৭৬৭টি।