ঢাকা: মিয়ানমারে সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও অন্যরা যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে, সেজন্য দেশটিতে চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে এ অঞ্চলের দেশগুলো ও জাতিসংঘের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১২ জুন) আমেরিকান সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আঞ্চলিক শরণার্থী সমন্বয়কারী ম্যাকেনজি রো এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জানা দরকার যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অবিচল অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে এ আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায় বহু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে কাজ করছেন তারা।’
এছাড়াও, ক্যাম্পের ভেতরে যা কিছু ঘটছে ও মানবিক সহায়তায় প্রভাব ফেলছে, তা উদ্বেগের ব্যাপার বলে উল্লেখ করেন এ আঞ্চলিক শরণার্থী সমন্বয়কারী।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের মধ্যে যে কোন ইস্যু মানবিক সহায়তাকে প্রভাবিত করতে পারে, এটি সব সময়ই উদ্বেগের ব্যাপার। আমাদের সহায়তা যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে যেন পৌঁছায়, সেটি আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা আমাদের অংশীদারদের সাথে কাজ করছি এবং যারা আমাদের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক, সেসব অংশীদারদের সাথে মিলে এ অবস্থার মোকাবিলা নিয়ে ভাবছি।’
জবাবদিহিবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে রো বলেন, ‘আইনের শাসনভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি একটি অপরিহার্য ভিত্তি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তার সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনের হাত থেকে বাঁচতে সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার পর থেকে সৃষ্ট এই সংকটে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশে থাকা শরণার্থী ও স্থানীয়দের সহায়তায় দিয়েছে প্রায় ২২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ একা নয় উল্লেখ করে রো আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু সরকার, জাতিসংঘের সংস্থা এবং এনজিও অংশীদারিত্ব করছে।’
শরণার্থীরা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত উদারভাবে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ম্যাকেনজি রো বলেন, ‘২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে সামনে রেখে যারা সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের দুর্দশা স্মরণ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘তারা সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগসহ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা ও সুরক্ষা দিচ্ছেন, যা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি অনুকূলে হলে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সাথে ও টেকসই প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য দক্ষতা বিকাশে সহায়ক। এ ছাড়া, কক্সবাজার অঞ্চলে দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার করা এবং রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতের কাজ করছে।’
রো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের অংশীদার ও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক, যাতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি ইতিবাচক পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’
পুনর্বাসন প্রচেষ্টা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে ম্যাকেনজি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ২০২৪ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ২৫ হাজার শরণার্থীকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য ফের নির্ধারণ করেছেন।’
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২-১৩ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, এটা বৈশ্বিক। আমরা আশাবাদী যে, আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। এরপর আমাদের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন নয়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, সময়ের সাথে সাথে এ সংখ্যা বাড়বে।’
রো বলেন, ‘তাদের নিজ দেশে টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনই চূড়ান্ত লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমি পূর্বেও বলেছি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত সহায়তা করতে অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘের সংস্থা, এনজিও এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশ এখন কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।