নিউজ ডেস্ক: ব্যথা কিংবা অস্বস্তিকর অনুভূতি দিতে তৈরি করা হয় কম প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতীর চেয়ে কম হিসেবে পরিচিত অস্ত্রগুলো। অভিবাসীদের আটকে ফেডারেল সরকারের অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস। এ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রবিবার থেকে ‘কম প্রাণঘাতী’ অস্ত্র মোতায়েন শুরু করেন ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
ব্যথা কিংবা অস্বস্তিকর অনুভূতি দিতে তৈরি করা হয় কম প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতীর চেয়ে কম হিসেবে পরিচিত অস্ত্রগুলো। সাধারণত সংঘবদ্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তবে এগুলোর প্রয়োগে মারাত্মক আহত কিংবা প্রাণহানির নজির আছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যবহার হয়েছে, এমন সাতটি কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের তালিকা তুলে ধরেছে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য ও লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট-এলএপিডির তথ্যের ভিত্তিতে এ তালিকা করে।
১. স্পঞ্জ গ্রেনেড
একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং রবিবার পায়ে গুলির আঘাত পাওয়া একজন রিপোর্টারের ভাষ্য, এলএপিডির কর্মকর্তারা রাবার বুলেট ছুড়েছেন, তবে এলএপিডি জানায়, তারা রাবার বুলেট ব্যবহার করে না। এর পরিবর্তে তারা ফোম রাউন্ডস বা স্পঞ্জ গ্রেনেড ব্যবহার করে। স্পঞ্জ দিয়ে মোড়ানো গুলিটি নার্ফ কোম্পানির শক্ত বলের মতো।
এ গুলির একটি সংস্করণ ছোড়া হয় ৪০ মিলিমিটার লঞ্চার থেকে। সাধারণত এটি লক্ষ্যবস্তুর দিকে সরাসরি তাক করা হয়। আরেকটি সংস্করণ ছোড়া হয় ৩৭ মিলিমিটার লঞ্চার থেকে। এটি কোনো ব্যক্তির দিকে সরাসরি ছোড়া হবে না বলে জানায় এলএপিডি। দুটি সংস্করণের কাজই চামড়ার ভেতরে প্রবেশ না করে শরীরে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি। কারও মাথা, গলা, কুঁচকি কিংবা মেরুদণ্ড লক্ষ্য করে স্পঞ্জ গ্রেনেড ছোড়ার অনুমতি নেই পুলিশের।
২. বিন ব্যাগ রাউন্ড
সাধারণত ৩৭ মিলিমিটার কাপড়ের ব্যাগে এক দশমিক চার আউন্স সিসা বা রাবারের গুলিকে বিন ব্যাগ রাউন্ড বলা হয়। এসব গুলি ছোড়া হয় শটগান থেকে। এ গুলি ব্যবহারের উদ্দেশ্য চামড়া ভেদ না করে লক্ষ্যবস্তুকে সাময়িকভাবে অনড় করে দেওয়া।
৩. ফ্ল্যাশ ব্যাং
ফ্ল্যাশ ব্যাংকে বিক্ষিপ্ত করার ডিভাইসও বলা হয়। এর মাধ্যমে কানে তালা ধরা শব্দ এবং চোখের সামনে উজ্জ্বল আলো সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে লক্ষ্যবস্তু সাময়িক সময়ের জন্য দেখতে কিংবা শুনতে পায় না। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংস পন্থার আশ্রয় নেওয়া লোকজনের ওপর কিংবা সংঘবদ্ধ জনতার মধ্য থেকে অপরাধীকে ধরে আনতে প্রায়ই এ অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪০ মিলিমিটার এরিয়াল ফ্ল্যাশ ব্যাং ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. টিয়ার গ্যাস
দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহুল ব্যবহৃত একটি অস্ত্র টিয়ার গ্যাস। এটি প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য চোখ, নাক, ফুসফুস ও চামড়ায় অতিরিক্ত জ্বালা সৃষ্টির মাধ্যমে লোকজনকে সাময়িকভাবে নিশ্চল করে দেওয়া। টিয়ার গ্যাস সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানো, চোখ ও নাক থেকে পানি ঝরা, কাশি কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৫. পেপার স্প্রে
কোনো ব্যক্তির মধ্যে টিয়ার গ্যাসের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে পেপার স্প্রে। হাতে থাকা একটি ক্যান থেকে এ স্প্রে ছোড়া হয়। দাঙ্গাকারী বা বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি অবস্থানে গেলে কিংবা হাতাহাতি শুরু হলে প্রায়ই এ স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। এটি মূলত চোখে জ্বালা ধরিয়ে সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়।
৬. পেপার বল
পেপার স্প্রের মতো প্রভাব তৈরি করে পেপার বল, তবে পেপার বল ছোড়া হয় পেইন্টবল সদৃশ একটি প্রজেকটাইল আকারে। পুলিশ সাধারণত কোনো ব্যক্তির দিকে সরাসরি পেপার বল ছোড়ে না, তবে সড়কের সাইন, ভবন কিংবা মাটিতে অস্ত্রটি ছোড়ে বাহিনীটি।
৭. লাঠি
সবচেয়ে প্রাচীন কম প্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে পরিচিত লাঠি। দশকের পর দশক সংঘবদ্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণে লাঠি ব্যবহার হয়ে আসছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ ও আঘাত করতে লাঠি ব্যবহার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।